অনলাইন ডেস্কঃমোংলা বন্দরের সক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং, আধুনিক নৌযান ও ইকুইপমেন্ট সংযোজনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জাহাজ আগমন ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। বন্দরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে মোংলা বন্দর তৈরির পর ৮০ দশকের শেষদিক পর্যন্ত বন্দরটি মোটামুটি ভালোভাবে চলেছে। কিন্তু ৯০র দশকের পর থেকে বন্দরটি ক্রমেই রুগ্ন হয়ে পড়ে। দিনের পর দিন জাহাজ না আসায় এটি ‘মৃতপ্রায়’ বন্দরে পরিণত হয়। এভাবে বেশ কিছু বছর অতিক্রমের পর দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দরটিকে রুগ্ন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্দরে বিরাজমান নানা সমস্যা ও সংকট দূর করে এটিকে আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মৃতপ্রায়’ বন্দরটি ধীরে ধীরে আধুনিক বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। যে ব্যবসায়ীরা একসময়ে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সময়ের ব্যবধানে সে ব্যবসায়ীরা আবার এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাজ আগমন ও মালামাল ওঠানামার পরিমাণ দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। গত এক অর্থ বছরের ব্যবধানে এ বন্দরে জাহাজ আগমন, পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ও আয় অনেকাংশে বেড়েছে।বন্দরের অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে এ বন্দরে জাহাজ এসেছে ৭৮৪টি আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৯১০টি। এক বছরের ব্যবধানে এখানে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৬টি। একইভাবে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ মেট্রিক টন আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পণ্য ওঠানামা করেছে এক কোটি দুই লাখ মেট্রিক টন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে এ বন্দরে পণ্য ওঠানামার ব্যবধান বেড়েছে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া গত এক অর্থ বছরের ব্যবধানে এ বন্দরে কন্টেইনার ওঠানামা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ হাজার ১১টি। অপরদিকে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে মোংলা বন্দরে আয় হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা আর সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাত্ এক বছরে বন্দরের আয় বেড়েছে ৩৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বন্দরের নীট মুনাফা ছিল ১১০ কোটি টাকা আর সদ্য শেষ হওয়া অর্থ বছরে নীট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া অর্থ বছরে বন্দরে নিট মুনাফা বেড়েছে ২৫ কোটি টাকা।বন্দরের প্রকৌশল ও উন্নয়ন বিভাগ সূত্র জানায়, বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানে নানা প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হওয়ায় বন্দরের সক্ষমতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যে পশুর নদীতে ড্রেজিং করায় নাব্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনায়াসে বড় বড় জাহাজ বন্দর চ্যানেলে প্রবেশ করতে পারছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আধুনিক নৌযান বন্দরে সংযোজন করা হয়েছে। অপরদিকে ইতিমধ্যে বন্দর জেটিতে চারশ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল হারবার ক্রেনসহ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং-এর জন্য বিভিন্ন আধুনিক ইকুইপমেন্ট সংযোজন করা হয়েছে এবং আরো আধুনিক ইকুইপমেন্ট সংযোজনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামাসহ ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন খান জানান, বন্দর ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিরাজমান সমস্যার সমাধানসহ চ্যানেলে ড্রেজিং ও বিভিন্ন আধুনিক ইকুইপমেন্ট সংযোজন করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বন্দরে আরো ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান বিএন বলেন, ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে মোংলা বন্দর গতিশীল হয়ে উঠছে। এতে করে জাহাজ আগমন ও পণ্য ওঠানামার পাশাপাশি বন্দরের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে ৭৫টি হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজনসহ বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এগুলো যোগ হলে বন্দরে কাজের গতি আরো বাড়বে।