মোংলা বন্দরের সিবিএ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। তারা প্রতিক বরাদ্দ পেয়ে নেতা নির্বাচিত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের (সিবিএ) ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নির্ঘুম রাতও কাটছে। প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থীকে পরাজিত করতে এরই মধ্যে কর্মচারীদের নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, বন্দর ব্যবস্থাপনায় “মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘ” (সিবিএ) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বলেই সংশিষ্টদের নজর সেদিকে। বন্দর ব্যবহারকারীরাও চাচ্ছেন বন্দরের কর্মচারীদের পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব আসুক। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি আলাদা প্যানেলের ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তবে নাসির উদ্দিন চৌধুরী-ফিরোজ আহম্মেদ, সওকত আলী-মতিয়ার রহমান সাকিব ও নাসির মৃধা-পল্টু এই তিনটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিলেও সভাপতি পদে নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও নাসির মৃধার সাথে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরোজ আহম্মেদ ও মতিউর রহমান সাকিবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়ায়ের আভাস মিলেছে।
কারণ হিসেবে কর্মচারী সংঘের ভোটাররা বলছেন-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিকারী অপর প্রার্থী কাজী খুরশিদ আলম পল্টু একজন দূর্ণীতিবাজ কর্মচারী। একবার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন টাকার বিনিময়ে এবং স্বজনপ্রীতি করে নিজের লোককে বন্দরে চাকরী পাইয়ে নানা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দু হন তিনি। এর আগে তিনি ২০১২ সালে বন্দরে চাকরীতে অবস্থায় ১২৪ দিন বিদেশে থেকে কর্মচারী বিধিমালা লংঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ শাহীনুর আলম তার ব্যাপারে বলেন, বন্দরের হারবার বিভাগের শিপ মুভমেন্ট পদে কর্মরত কাজী খুরশিদ আলম পল্টুর বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশের তদন্তে দূর্ণীতি আর অনিয়মের প্রমান মিলেছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শোভন সরকারের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দরের হারবার মাষ্টার ও সচিব (ভারপ্রাপ্ত) কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, পল্টুর বিরুদ্ধে একাধিকবার তদন্ত হয়ে এখন শেষ পর্যায়ে আছে। এখন বিধি অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেওয়ার সে ব্যবস্থা নিতেই কর্তৃপক্ষ যাচ্ছে।
তবে পল্টুর দাবি, দোষ স্বীকার করায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পল্টু দূর্ণীতিগ্রস্থ হওয়ায় বন্দরের কর্মচারীদের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বন্দরের কর্মচারী ইলিয়াস ড্রাইভার, মোঃ মোহন, মোকলেছুর রহমান, ও শিহাব উদ্দিন বলেন, এসব লোক নিজেই দূর্ণীতিবাজ হলে কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে কি ভূমিকা রাখবেন? মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী আহসান হাবীব হাসান বলেন, একাধিকবার তদন্ত হওয়ার পরও পল্টুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। এই লোক কর্মচারীদের নেতা হলে আবারও দূর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়বেন বলেও আশংকা করেন তিনি।
৮৪৩ জন কর্মচারীদের নেতা নির্বাচনে আগামী ১৭ অক্টোবর নির্বাচন সুষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে জানিয়ে, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ সচিব মুন্সি মাকরুজ্জামান বলেন- ঢাকা সেগুন বাগিচার লিঁয়াজো অফিস, খুলনা বন্দর কর্তৃপক্ষের মিলনায়তন, মোংলা বন্দর স্কুল এন্ড কলেজ ও বন্দরের হিরন পয়েন্ট রেষ্ট হাউসের এই চারটি ভেন্যুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে নির্বাচনে নেতা হতে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, একাধিকবার নেতা হয়ে আমি এখন কর্মচারী বান্ধব। তাদের বিপদ ও অসুবিধার কথা শুনলে আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি। তাদের কল্যান ও ন্যায্য দাবি আদায়ে সবসময় সরব ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো বিধায় তারা আমাকে আবার নির্বাচিত করবেন। প্রতিদ্বন্ধি অপর প্রার্থী মতিয়ার রহমান সাকিব বলেন, বেশ কয়েকবার কর্মচারীদের নেতৃত্ব দিয়েছি। কখনও দূর্ণীতি করিনি, কর্মচারীদের দাবি আদায় করে দিয়েছি। এজন্য তারা আমাকেই নির্বাচিত করবেন।