বাগেরহাটের মোল্লাহাটে শান্ত কুমার সাহা ও মোঃ এমদাদুল হক নামে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীর দুই ম্যানেজারের (কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব চুরি/ফাকির অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। উপজেলার জিড়েনতলা আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীতে বুধবার দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে এ বিক্ষোভ।
রাজস্ব চুরি হাতেনাতে ধরা ও শ্রমিক বিক্ষোভের খবরে সরেজমিনে গেলে বিক্ষোভরত বুলবুল মোল্লা, মাজেদা বেগম, বক্কার, সরোয়ার ও রেজাউল মোল্লাসহ নারী-পুরুষ শ্রমিকরা জানান, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার মোঃ এমদাদুল হক মোল্লাহাটে যোগদানের পর থেকে কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাকি/চুরি করে চলেছেন। আর এ কাজের মূল হোতা আঞ্চলিক ম্যানেজার শান্ত কুমার সাহা তাকে সব ধরনের যোগান ও সহযোগিতা করেন। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও শ্রমিকদের কাছে জাল ব্যান্ডরোল দেন ম্যানেজার। কাজও শুরু হয় স্বাভাবিক নিয়মে।
এরই মাঝে জনৈক পুরুষ শ্রমিক প্রথমে বুঝতে পারেন যে, তাদের মাধ্যমে বিড়ির প্যাকেটে যে, ব্যান্ডরোল (রাজস্ব ষ্টিকার) লাগানো হচ্ছে তা জাল/নকল। এরপর বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি ও চেক করে (সকল) বিশ লক্ষ ব্যান্ডরোল জাল পাওয়া যায়। যার রাজস্ব মূল্য এক কোটি নব্বই লক্ষ টাকা। এরপর ফ্যাক্টরীর কয়েক’শ (সকল) শ্রমিক মিলে ম্যানেজারকে চোর চোর বলে খোজে। তখন অবস্থা বেগতিক বুঝে ম্যানেজার নিজ অফিস কক্ষে ঢুকে ক্লপ্সবল গেটে তালা লাগিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। এরপর শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন রাজস্ব চুরি/ফাকির বিচার দাবীতে। এক পর্যায়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি পৌছে উদ্ভুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
নারী-পুরুষ শ্রমিকরা আরো জানান যে, সকল শ্রমিকরা আসল/নকল ভালো বোঝেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে এ ফ্যাক্টরীতে কাজ করেছেন, তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ ও মামলার আসামী করে বিতাড়িত করা হয়েছে। এরপর বিশেষ করে নারী ও যারা অনাভিজ্ঞ এমন শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে তাদের দিয়ে জাল/নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে সরকারকে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাকি দিচ্ছে।
শ্রমিকরা বলেন, সরকারকে ফাকি দেয়া মানে আমাদেরকে ফাকি দেয়া। সরকার আমাদের অনেক সাহায্য করে। এছাড়া ফ্যাক্টরীর মালিককে না জানিয়ে এ হেন চুরি করে চলেছে ওই দুই ম্যানেজার। শান্ত কুমার সাহা ও মোঃ এমদাদুল হকের এ অপরাধের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দলোন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
ফ্যাক্টরী সংলগ্ন কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান শ্রমিকদের সাথে একমত হয়ে জানান, ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার মোঃ এমদাদুল হক ও আঞ্চলিক ম্যানেজার শান্ত (শান্ত কুমার সাহা) সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে জাল লেবেল (জাল ব্যান্ডরোল) লাগিয়ে সরকারের ন্যাজ্য রাজস্ব ফাকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তার জানামতে মালিক এর সাথে জড়িক না। মালিককে না জানিয়ে সরকারের ট্যাক্স/রাজস্ব ফাকি দেয়ার মাধ্যমে অঢেল টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবীও করেন তিনি।
এবিষয়ে মুঠো ফোন করা হলে নিজের সম্পৃক্ততার কথা এড়িয়ে আঞ্চলিক ম্যানেজার শান্ত কুমার সাহা বলেন, ঘটনা যাই হোক সমাধা করবেন মালিক। এতে ফ্যাক্টরীর ক্ষতি ও বিক্ষোভ করা যাবে না।
জিড়েনতলা ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার মোঃ এমদাদুল হক স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে বলেন, তিনি মাত্র দেড় বছর হয়েছে এখানে এসেছেন, এসব আগে থেকে হচ্ছে, শ্রমিকরা জাল ব্যান্ডরোল আনতে পারে। তবে, জাল ব্যান্ডরোল ব্যাবহারে শ্রমিকের কি লাভ ? এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন, আমি চাকরি করি, এটা উপরের (মালিকের) বিষয়। যে, কারণে পরিস্কার করে বলতে পারনবেন না বলেও জানান তিনি। অপর প্রশ্নোত্তরে তিনি জানান, এখান থেকে প্রতিদিন এক লক্ষ বিশ হাজার প্যাকেট বিড়ি তৈরী হয়, যার প্রতি প্যাকেটের গায়ে রাজস্ব নয় টাকা পঞ্চাশ পয়সার ব্যান্ডরোল লাগানোর পর আঠারো টাকায় বাজারজাত করা হয়।