চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃময়ূরসহ নগরীর পার্শ¦বর্তী ২৬টি নদী-খাল দখলমুক্ত করতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। কেসিসি ও জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযান ময়ূর নদীর বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকা থেকে শুরু হবে। অভিযানে উপস্থিত থাকবেন কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ও কাউন্সিলরবৃন্দসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে পর্যায়ক্রমে ৪৬০ দখলদারের ৩৮২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
জানা গেছে, মহানগরীসহ আশপাশের খাল ও নদী বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে দুই পাড় দখল করা হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়ক ও ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে পানি জমে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে ময়ূর নদী ও ২৬টি খালে যৌথ জরিপ জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সরকারের ৪টি সংস্থা। জরিপ শেষে ৪৬০জনের দখলদার এবং ৩৮২টি স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে ময়ূর নদীতে রয়েছে ৭৯ জন ব্যক্তি ও ৬৩টি স্থাপনা। এরপর কেসিসির ৭তম সাধারণ সভায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে খালের এসব অবৈধ উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
কর্পোরেশনের বৈষয়িক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বেলা ১১টায় ময়ূর নদীর বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করে সকলকে জানানো হয়েছে। অভিযানে উপস্থিত থাকবেন কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ও কাউন্সিলরবৃন্দসহ পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে ৪৬০ দখলদারের ৩৮২টি স্থাপনা।
অপরদিকে ভৈরব নদীর তীরভুমি পরিমাপে জেলা প্রশাসন এবং বিআইডাব্লিউটিএ’র যৌথ জরিপ কমিটি করা হয় । জরিপ কমিটির আহবায়ক, জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হারুনুর রশিদ জানান, জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের তালিকাও প্রস্তুত হয়েছে। এখন যে কোনো সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হতে পারে।বিআইডাব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, লবণচরা খাল থেকে মজুুতখালী নলা পর্যন্ত নদীর দু’তীরের অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে উচ্ছেদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিটিএ খুলনার বন্দর ও পরিবহণ উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভৈরব ও রূপসা তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে আজ রোববার জেলাপ্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক হবে। এই বৈঠকেই অভিযানের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো সময় অভিযান শুরু হবে। তবে, অবৈধ দখলদাররা স্ব-উগ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে না নিলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপর একটি সুত্র জানায়,খুলনা বড় বাজার পেরিফেরির ডিসি আর,ভুমি লাইসেন্স দিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এস এ শাখার প্রধান সহকারী আব্দুল হাই এবং বিআইডাব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা পিযুষ কান্তি ঘোষ পরস্পর যোগ সাজসে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা । এ ছাড়াও দৌলতপুর বাজার ও ভৈরব নদীর তীরবর্তী জুট প্রেস ও পাট গুদাম মালিকদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে আব্দুল হাই ও পিযুষ কান্তি ঘোষ নিজেদের পকেট ভাড়ি করছেন ।
বিআইডাব্লিউটিএ’র রেকর্ড অনুযায়ী ভৈরব ও রূপসা নদীর তীরের উল্লেখযোগ্য অবৈধ দখলদাররা হচ্ছে- মমিন ঘাট এলাকার সিরাজুল ইসলাম, সুন্দরবন ট্রেডার্স, অমিত বিশ্বাস, গৌতম সাহা, যমুনা ট্রেডার্স, ইন্তাজ বাণিজ্য ভা-ার, সুর্কিঘাট এলাকার রুহুল আমিন, মোঃ সেলিম, আব্দুল খালেক, মামুন হোসেন, আজিজুর রহমান সোহাগ, আব্দুস সালাম মালিক, ফিরোজ শেখ, রফিকুল ইসলাম, মীর মাহাবুব, সাজ্জাদ হোসেন, নিত্য গোপাল কংস বণিক, নিউ কংস বণিক ভা-ার, নহিদ আহমেদ, সূতাপট্টির কামরুজ্জামান টুকু, গাজী এনামেল, সুভাস চন্দ্র দাস, জগদিশ চন্দ্র দাস, বিনয় কৃষ্ণ সাহা, মা মনি হার্ডওয়ার, জয় দুর্গা বস্ত্রালয়, তাপস কুমার সাহা, জনকল্যাণ বস্ত্রালয়, দুলাল চন্দ্র সাহা, কবিতা হার্ডওয়ার, তারা হার্ডওয়ার, ভৈরব হোসিয়ারী স্টোর, গোপালগঞ্জ হার্ডওয়ার, দুর্গা রানী পাল, বিসমিল্লাহ অ্যালুমোনিয়াম, হোসেন ট্রেডিং, আবুল হোসেন, লুনা ট্রেডিং, খুলনা আয়রন স্টোর, রূপালী হার্ডওয়ার, আমীন হার্ডওয়ার, লিজা ট্রেডিং, বিক্রমপুর অ্যালুমোনিয়াম, সততা অ্যালুমোনিয়াম স্টোর, সুলভ হার্ডওয়ার, খুলনা ট্রেডিং, জনতা হার্ডওয়ার, প্লাস্টিক কর্নার, এনায়েত স্টোর, শহিদ অ্যান্ড সন্স, জে কে স্টোর, খানজাহান আলী হার্ডওয়ার, সুমিত্রা হার্ডওয়ার, ইউনাইটেড হার্ডওয়ার, বাংলাদেশ হার্ডওয়ার, ন্যাশনাল হার্ডওয়ার, মদিনা হার্ডওয়ার, ফিরোজ স্টোর, খান হার্ডওয়ার, মক্কা হার্ডওয়ার, বিসমিল্লাহ স্টোর, বাগদাদ হার্ডওয়ার, মেহেদী বাণিজ্য ভা-ার, আশা বাণিজ্য ভা-ার, সবুজ বাণিজ্য ভা-ার, হাওলাদার ট্রেডিং, মোহাম্মাদীয়া ভা-ার, বাগদাদ ট্রেডিং, সোহেল ট্রেডার্স-১, সোহেল ট্রেডার্স-২, গাউছিয়া ভা-ার, নিউ আব্দুল্লাহ ভা-ার, লোকনাথ ভা-ার, মা মনি ট্রেডার্স, সুমাইয়া ট্রেডার্স, এ কে ট্রেডার্স, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, মদিনা ট্রেডিং, সুমন বাণিজ্য ভান্ডার ও বাংলাদেশ ভান্ডার।
এছাড়া অবৈধ দখলদারের তালিকায় মোট ১ হাজার ১৫৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও নগরীর দৌলতপুরে রয়েছে লঞ্চঘাটে ইটের ব্যাবস্যা,নদীর তীরবর্তী দৌলতপুর বাজারের কিছু ব্যাবসায়ী,পাট রপ্তানী কারক আঃ রাজ্জা লিঃ,মেসাস মাহাবুব ব্রাদার্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ফ্লাওয়ার মিল । এই মিলটি নদীর এডিলাইন থেকে প্রায় ৫০/৬০ ফুট জায়গা দখল করে সেখানে পাইলিং করে স্থাপনা নির্মান করছে । ,মন্ডল জুট,উত্তরা জুট,পপুলার জুট এক্সেঞ্জ,খাঁন ব্রার্দাস,সাগর জুট,চন্দ্রপুরী জুট প্রেস,ঢাকা ট্রেডিং হাউজ,ইউনাইটেড জুট প্রেস,এস আর জুট,খুলনা জুট ইন্ডাট্রিজ,বেলালা জুট,লক্ষন জুটসহ অসংখ্য পাট রপ্তানী কারকরা ভৈরব নদীর তীর ভুমি দখল পুর্বক তােদর সীমানা বাড়িয়ে চলায় নদীর প্রস্থ দিনকে দিন সরু হয়ে আসছে । আর এই সকল প্রতিষ্ঠানকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তৎকালীন প্রধান সহকারী আব্দুল হাই এবং বিআইডাব্লিউটিএ’র সম্পত্তি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা মোটা অংকের ঘুষ খেয়ে এ সব প্রতিষ্ঠানকর লাইসেন্স প্রধান করেছে । যা কিনা নিতিমালা বহিভুত কাজ ।