চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোরের দু’টি উপজেলায় চলতি মাসে গণপিটুনিতে ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন। অভয়নগর ও ঝিকরগাছায় ছিনতাইকারী, গরু চোর এবং ভ্যানচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে এদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে গণপিটুনির শিকার পাঁচ জন অভয়নগর উপজেলায় এবং একজন ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রাণ হারান। এসব ঘটনার পর আইন হাতে তুলে নেয়া রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা পুলিশ। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং, উঠান বৈঠক, ওপেন হাউজ ডে এবং ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি রাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় সুন্দলী এলাকায় মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে মামুন রশিদ (২৪) নামে এক তরুণ নিহত হন। তিনি অভয়নগর উপজেলার জিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে। পুলিশ জানায়, ওইদিন রাতে মণিরামপুর উপজেলার হরিদাশকাটি গ্রামের বিদ্যুৎ মণ্ডল তিন যাত্রী নিয়ে মোটরসাইকেলে করে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় যাচ্ছিলেন। সুন্দলী বাজারের পাশে একটি মাছের ঘেরের সামনে পৌঁছালে মোটরসাইকেল থাকা যাত্রীবেশী তিন ছিনতাইকারী তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় বিদ্যুৎ মণ্ডল তাদের একজনকে জাপটে ধরে চিৎকার শুরু করলে সুন্দলী বাজার এবং আশপাশের লোকজন ছুটে এসে মামুন রশিদকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মামুনের মৃত্যু হয়। গত ১৩ জানুয়ারি ভোর চারটার দিকে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রামের মজুমদারপাড়ার রেলক্রসিংয়ের সামনে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তিন ব্যক্তি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুই ব্যক্তির নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ওই দুই জন হলেন সোহেল (২৭) ও সৈকত (৩০)। তারা খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানার রেলিগেট এলাকার বাসিন্দা।এছাড়া গত ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে ঝিকরগাছা উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামে গরুচোর সন্দেহে ইলিয়াস (৩৫) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ইলিয়াস যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের ফজলু মিস্ত্রির ছেলে। পুলিশ জানায়, রাত দুইটার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের ইনছান আলী মোল্লার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি করার সময় গ্রামবাসী ইলিয়াস ও আবদুলকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। স্থানীয় লোকজন তাদের পিটুনি দিয়ে মাঠে ফেলে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে ইলিয়াস মারা যান।
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি ভোররাতে ভ্যানচোর সন্দেহে অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের মাঠপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে ইলিয়াস শেখ (৪০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। ইলিয়াস শেখের বাড়ি শুভরাড়া গ্রামে। বাবার নাম হাকিম শেখ।
এ ব্যাপারে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনিতে সন্দেহভাজনদের হতাহতের ঘটনা রোধে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে ইতোমধ্যে জনসচেতনামূলক কাজ শুরু করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি পুলিশের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে মাইকিং, উঠান বৈঠক, ওপেন হাউজ ডে’র পাশাপাশি ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারণা। এছাড়া জেলার সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িকে তৎপর থাকার চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব সচেতনতামূলক কার্যক্রম থেকে নাগরিকদের সন্দেহভাজন কাউকে পিটিয়ে হত্যা না করে নিকটস্থ থানা বা পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দের আহ্বান জানানো হয়েছে।