চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোরে ভৈরব নদ খননে নতুন করে ৫৯ অবৈধ স্থাপনা চিহিৃত করা হয়েছে। শহরের নীলগঞ্জ এলাকায় নদীর পাড়ের বিজিবির সীমানা প্রাচিরসহ অন্যান্য স্থাপনা এ মাসের শেষ নাগাদ উচ্ছেদ করা হবে। একই সাথে নদের পানি সেচে ফেলে কাঠেরপুল থেকে বিরামপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার অংশ খনন করা হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদী ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার খনন কাজ হবে। ইতোমধ্যে নদের উজান ও ভাটির ৭০ কিলোমিটারের বেশি কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া কিছু অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে যশোর শহরাংশের চার কিলোমিটার এলাকায় খনন কাজ নিয়ে বিপাকে পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ অংশে প্রথম তিন দফা দরপত্র আহ্বান করা হলেও ঠিকাদাররা অংশ নেননি। কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় খননে জটিলতার আশঙ্কা। কিন্তু এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে গত ২৮ মার্চ শহরের দড়াটানা অংশের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর বাকি স্থাপনাগুলো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে, ভৈরব নদের খনন কাজে প্রথম দুই বার ৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনও ঠিকাদার অংশ নেননি। এরপর দরপত্রের মূল্য ৯ কোটি ৩০ লাখ করা হয়। এ মূল্যে দুই বার দরপত্র আহ্বান করেও সাড়া মেলেনি। পঞ্চমবারে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবারও কোন ঠিকাদার অংশ নেননি। পাঁচ দফা দরপত্রে কোনও ঠিকাদার অংশ না নেয়ায় বিপাকে পড়েন সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তারা পুনরায় দরপত্র আহ্বান করলে ১১ কোটি ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫ টাকায় এ কাজ পান মেসার্স এস এস এন্ড এম টি (জেভি)। এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা গোপালগঞ্জের পাঁচুরিয়া এলাকার মধুমতি সুপার মার্কেট। শহরের কাঠেরপুল থেকে বিরামপুর পর্যন্ত নদের মোট চার কিলোমিটার অংশ খননের জন্য তারা এ কাজ পান। দরপত্রে নদ খননের গড় গভীরতা ২.৭৫ মিটার ও গড় প্রশস্থ ৪৫ মিটার টপ টপ। এ খনন কাজ শুরুর তারিখ ছিল চলতি বছরের ৬ আগস্ট ও কাজ শেষ হবার তারিখ বেধে দেয়া হয়েছে ২০২০ সালের ২০ জুন। ইতিমধ্যে কাজ শুরুর সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু এ অংশে মূল নদ খননের কোন অগ্রগতি জনগনের চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র ভৈরব নদের পাড়ে চারটি এস্কভেটর মেশিন তিনমাস পড়ে রয়েছে। যদিও এ মেশিনগুলো কোন কোন দিন নড়েচড়ে বসছে। এস্কেভেটর দিয়ে এইচ এমএম সড়ক অংশের নদের পাড়ের গাছপালা ভেঙ্গে পরিস্কার করা হচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদার নদটি খননের কোন কাজে হাত দেননি। আর ভৈরব খননের গোটা কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা দ্রুত খনন কাজ শুরু করার জন্য যশোরে তাগিদ দিয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। এতে নড়েচড়ে বসেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এসব বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য বদলী হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, মাঝে বর্ষাকাল থাকায় নদ খনন স্থগিত ছিল। কারণ তখন নদে পানির প্রবাহ বেশি ছিল। এখন পরিবেশ খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ায় চলতি মাস থেকেই ভৈরব খননের কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, এবার নদের চার কিলোমিটার অংশের খনন কাজ বিশেষভাবে চালানো হবে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে নদের দড়াটানা ব্রিজের পশ্চিমদিক থেকে কিছু এলাকায় বাধ দেয়া হবে। এরপর পানি সেচে ফেলে লম্বা হাতলওয়ালা এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে খনন কাজ করা হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, নদ খননের পাশপাশি অবৈধ দখলদার চিহিৃত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শহরের নীলগঞ্জ অংশে নতুন করে ৫৯ দখলদার চিহিৃত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঝুমঝুমপুরস্থ বিজিবির সীমানা প্রাচির রয়েছে। এ মাসের শেষ নাগাদ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে তিনি জানান।