নাফি উজ জামান পিয়াল, যশোর প্রতিনিধি: দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সব কিছু স্থবির হয়ে আছে।
সাধারণ জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রভাবে । আর এর মধ্যে এক অজানা দুশ্চিন্তায় পড়েছে যশোরের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা পড়েছে মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে। গত মার্চ মাসে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সবাই নিজ নিজ বাড়ি চলে গেলেও মেস ভাড়া প্রদানের জন্য মেস মালিকরা চাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
যশোর শহরের সরকারী এম এম কলেজ, সরকারী সিটি কলেজ, মহিলা কলেজ, উপশহর ডিগ্রি কলেজ, উপশহর
মহিলা কলেজ, ড. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, ক্যান্টেনমেন্ট কলেজ, দাউদ পাবলিক কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, হামিদপুর ডিগ্রি কলেজ, যশোর কলেজ, সরকারী পলিটেকনিক ইনন্সটিটিউট, বিসিএমসি কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী শহরের বিভিন্ন মেসে থেকে পড়াশুনা করে। এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যশোর শহরের প্রায় ৫০ টি পয়েন্টে তিন হাজারের মতো মেস আছে যেখানে এসকল শিক্ষার্থীরা থাকে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ফলে তারা পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনিসহ বিভিন্ন পার্ট টাইম কাজ করে পড়াশুনার খরচ ও মেসের খরচ বহন করে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসে তারা কিছুই করতে পারছে না ফলে তাদের পক্ষ্যে মেস ভাড়া দেওয়াটা যেন মরার উপর খারা ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকারী এম এম কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তিনি জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পরই মেস থেকে নিজের বাসায় চলে গিয়েছে, এখন আর মেসে থাকছে না কিন্তু মেসের মালিক এরপরও যদি ভাড়া দাবি করে তাহলে সেটা অযৌক্তিক হবে।
যশোর সিটি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের আব্বাস নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে পড়াশুনার খরচ চালাই, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে আমাদের কাছে টাকা নেই। এমন পরিস্থিতিতে মেসের মালিক কি করবে সেটা আমি জানি না।
যশোরের খড়কী এলাকার মো: আজিজুল ইসলাম নামের এক মেস মালিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার
এখানে ১০-১২ জন মেয়ে থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমি তাদের গতমাসের ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছি, কিন্তু বিদুৎ ও পানির বিলটা তাদের থেকে নিতে চাই।
খড়কী রূপকথার গলিতে এক মেস মালিকের মেয়ে সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের এখানে বেশি শিক্ষার্থী
থাকে না, ফলে তাদের মেসের ভাড়া মওকুফ করা হলে আমাদের সংসার চালাতে অসুবিধা হবে। আমাদের সংসার
চলে মেসের ভাড়া দিয়ে।
অন্যদিকে শহরের কারাবালস্থ মহিলা কলেজের পাশে সাইফুর রহমানের মেসে থাকা সকলকেই তিনি ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলে মহামারির এই পরিস্থতিতে মানবিকতা থেকেই আমি তাদের
থেকে ভাড়া মওকুফ করে নিয়েছি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ( ৩০ এপ্রিল ) যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন যশোরের মেস মালিকদের মেসের ভাড়া মওকুফের জন্য আহবান জানান। একই সঙ্গে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন পিপিএম, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চিঠিও পাঠিয়েছেন।