নাফি উজ জামান পিয়াল, যশোর প্রতিনিধি: যশোরে করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়েছে। প্রথম দিক থেকেই চাহিদার চেয়ে যোগান কম হওয়ায় বাজারে এর
ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ফার্মেসি ও রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানগুলোয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে প্রতিদিনই ভিড়
করছে সাধারণ মানুষ। এই করোনাকালকে পুঁজি করে নকল স্যানিটাইজারে সয়লাব বাজার। নামিদামি ব্রান্ডের
নামের বানানের দুই একটি শব্দের হেরফের করে হুবহু নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে। আবার হুবহু নকল
তৈরি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন অসাধু চক্র। এসব নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে
মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এলাকা, চিত্রা মোড় বঙ্গ বাজারের ফার্মেসি ও
রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকানগুলোতে দেশের তৈরি এক্টিভ হ্যান্ডরাব ৫০ মিলিগ্রাম ৫০ টাকায়, হেক্সিরাব ৫০
মিলিগ্রাম ৬০ টাকায়, ক্যাভলন এক লিটার ৩৮০ টাকায়, নকল কেরুজ হ্যান্ড সেনিটাইজার ১০০ মিলিগ্রাম ৬০
টাকায়, হ্যান্ডসান ২০০ মিলিগ্রাম, ভিটাসল ১০০ মিলিগ্রাম ১০০ টাকায়, কেয়ার হেক্সসল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৫০
মিলিগ্রাম ৪০ টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে। এসব পণ্য সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোতলের গায়ে দেশীয় নামের
প্রতিষ্ঠানের তৈরি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম লেখা রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশি-বিদেশি কোম্পানির বোতল ও
মোড়ক হুবহু নকল করে বাজারজাত করছেন। অধিকাংশ পণ্যের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও নেই।
এমনকি কোন প্রতিষ্ঠান আমদানি করেছে তারও কোনো স্টিকার নেই। আর কোনো কিছু যাচাই না করেই এসব
হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনছেন সাধারণ মানুষ। তবে অনেক পণ্যের গায়ে বিভিন্ন ধরনের নকল কোম্পানির নাম
লেখা দেখা যায়। যাদের কোনো অনুমোদন নেই। বাজারে পণ্যের চাহিদা বেশি ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভে
বিক্রি করতে পারায় ওষুধ দোকানিরা নির্দ্বিধায় এসব নকল ও অনিরাপদ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রয় করতে দেখা
গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন, করোনা আসার পর থেকেই
দেশি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা চাহিদামতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে পারছিল না। এ সুযোগে বিভিন্ন
এলাকায় নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ভালো পণ্য বলে বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে।
এখন মানুষকে বোকা বানিয়ে একটি চক্র নকল স্যানিটাইজার দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে
বর্তমানে আমাদের দেশীয় আসল হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনো অভাব নেই। ক্রেতারা একটু সচেতন হলেই বাজার
থেকে আসল হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে পারবেন।
সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, বাজারের ওইসব অনুমোদনহীন ও ক্ষতিকর হ্যান্ড স্যানিটাইজার
ব্যবহারকারীরা চর্মরোগ, পেটের পিড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এতে জীবাণু ধ্বংস না হয়ে
মানবদেহের ক্ষতি হতে পারে। বাজারে বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে অসাধু চক্রগুলো এমনটি করছেন। যা
অপরাধ ও অমানবিক কাজ। নকল ও অনিরাপদ এসব পণ্য যাতে ফার্মেসিগুলোয় বিক্রি বন্ধ হয় সে লক্ষ্যে
শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে ওষুধ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত।