যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের স্টাফ কোয়ার্টারে অগ্নিকান্ডে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ঘটনার সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর তুহিন কান্তি খান বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কারারক্ষী কোয়ার্টারে আগুন লেগে ছয়টি পরিবারের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি পরিবারের নগদ ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পুড়ে গেছে বলে তারা জানিয়েছেন। পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের সুপার আনোয়ার হোসেনকে। অপর দু’ সদস্য হচ্ছেন, জেলর তুহিন কান্তি খান ও ডেপুটি জেলার তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুপুরে খুলনার কারা উপ মহাপরিদর্শক ছগির মিয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সাথে আলোচনায় বসেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। একই সাথে দেয়া হয়েছে ৩০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। ব্যবস্থা করা হয়েছে আসবাবপত্রেরও। ছয়টি পরিবারকে নতুন ছয়টি কোয়ার্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ কারাগারের সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এ সংক্রান্ত চিঠি শুক্রবার সন্ধ্যায় হাতে পান। রোববার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান।
এদিকে, ঘরের আগুনে পুড়ে গেছে আছিয়া বেগমের টাকার বালিশ। প্রায় ৮ লাখ টাকা ছিল ওই বালিশে। অবসরে যাওয়ার পর বাড়ি করছিলেন তিনি। অর্থ-সম্পদ সব হারিয়ে জেলখানার অভ্যন্তরেই আহাজারি করছিলেন তিনি। শুক্রবার পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসস্তুপের পাশে বসে আহাজারি করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী আছিয়া বেগম। তার স্বামী আমিনুর রহমান প্রধান কারারক্ষী ছিলেন। তিনি অবসরে গেছেন দেড় বছর আগে। কারাগারের পাশেই শেখহাটি বাবলাতলা এলাকায় বাড়ি করছিলেন তারা। বাড়ির জন্য আমিনুর রহমানের পেনশনের ৮ লাখ টাকা ঘরে রাখা ছিল। টাকা রাখার জন্য ছোট্ট কাপড়ের বালিশ তৈরি করেছিলেন আছিয়া। আগুনে পুড়ে গেছে সেই টাকার বালিশ। আছিয়া বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার এশার নামাজ পড়ে উঠে ঘরে আগুন দেখে ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পানি দেয়ার জন্য সবাইকে ডেকেছেন, ছুটোছুটি করেছেন। পরে ঘরে উকি দিয়ে দেখেন দাউ দাউ করে সব জ্বলছে। টাকার বালিশসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তার ছেলে আলভি আহমেদ জানান, শেখহাটি বাবলাতলায় তারা বাড়ি করছিলেন। কারাগারের কোয়ার্টার থেকে তাদের চলে যাওয়ার কথা। দু’এক মাসের মধ্যেই তারা বাড়িতে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ির জন্য ঘরে আট লাখ টাকা রাখা ছিল। সেই টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুধু আছিয়া বেগমের পরিবারই নয়, কোয়ার্টারের ছয়টি পরিবারের সবকিছুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রত্যেক পরিবারেই টাকা, পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রসহ সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। প্রতিটি পরিবারের কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমান কোটি টাকার মত বলে সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি।
এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরজাহান ইসলাম নীরা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কোয়ার্টারে অগ্নিকাণ্ডে ৬টি ঘর পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা প্রায় দেড়ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।