চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোর জেলা আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব অক্ষুন্ন রইলো। সভাপতি পদে শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ফের তিন বছর দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ঘোষণা দেন। এর আগে তিনি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেন বলে জানান।
দুপুর পৌনে ১২টায় যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়। দুপুর ২টায় বক্তৃতা শুরু করেন সম্মেলনে প্রধান অতিথি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তিনি দলের যশোর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে চান এমন ১২ জনের নাম পড়েন। এর মধ্যে ৬ জন সভাপতি ও ছয় জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানানো হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০ মিনিট সময়। এই সময়ের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের সমঝোতা করতে হবে। আর সমঝোতা না হলে দলীয় প্রধানের সাথে কথা বলে সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। এ সময় তিনি মাঠে উপস্থিত সবার এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন আছে কি-না জানতে চান। উপস্থিত নেতা-কর্মীরা এতে হ্যাঁ-সূচক সমর্থন দেন।
পরে মূল দুই পদের ১২ প্রার্থীকে বাদশাহ ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউটের একটি কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখান থেকে প্রায় আধাঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে ওবায়দুল কাদের জানান, প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। সেই কারণে তিনি দলীয় প্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকটি পদে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের নাম ঘোষণা করেন।
প্রথমেই তিনি সভাপতি হিসেবে বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের নাম ঘোষণা করেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের নাম ঘোষণা করেন। এরপর অন্যান্য পদের কয়েকজনের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দায়িত্বশীলরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে পাঠাবেন। সেখানে থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হবে।
সহ-সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, আব্দুল খালেক, হায়দার গনি খান পলাশ, খয়রাত হোসেন। যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে এড. মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল আলম লিটন, মীর জহুরুল ইসলাম, যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। এই দুইজনকে যুবলীগ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, এক নম্বর সহ-সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যুবলীগের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রচার সম্পাদক হিসেবে মুন্সি মহিউদ্দিন আহমেদের নাম ঘোষণা করা হয়। আর সদস্য হিসেবে এমপি ইসমাত আরা সাদেক, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, শেখ আফিল উদ্দিন এমপি ও রণজিৎ কুমার রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শিগগির জেলা-উপজেলায় সন্ত্রাস বিরোধী এ্যাকশন শুরু হবে। দল ভারি করার জন্য খারাপ লোকদের দলে টানবেন না। সুবিধাবাদী, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীদের কোনো দরকার নেই। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে কোনো দুর্নীতিবাজের ঠাঁই হবে না। নতুন কমিটির বিষয়ে কাদের বলেন, নতুন কমিটি যেন পকেট কমিটি না হয়। আওয়ামী লীগ ত্যাগী, আদর্শবান কর্মীদের সংগঠন।
হলি আর্টিজান মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত এই মামলার রায়ে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়াবে। এই রায় জঙ্গিবাদী শক্তি এবং জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি অশনি সংকেত। আর দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ নিরাপদ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা কায়েমে এ রায় ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, অশুভ শক্তি বিএনপি-জামায়াতের তৎপরতা এখনো আছে। বিএনপি মহাসচিব কয়েক দিন আগে বললেন, আমরা সভা-সমাবেশের জন্য আর কারো কাছ থেকে অনুমতি চাইব না। আমি অবাক হয়ে গেলাম, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন, যারা আইনের শাসনের কথা বলেন, তারা কী করে এমন কথা বলেন। হানিফ জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে হবে না। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তির পথ খুঁজতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন তিনি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, সদস্য এস এম কামাল হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, এমপি কাজী নাবিল আহমেদসহ যশোরের ছয় আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।