নাফি উজ জামান পিয়াল, যশোর প্রতিনিধি :: যশোরকে লকডাউন করা হয়নি। লকডাউনের যে কথা প্রচারিত হচ্ছে, তা স্রেফ গুজব। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যাতে যশোরকে লকডাউন করতে হবে। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুরের দিকে যশোর পৌরসভার মেয়র তার কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বড়বাজারকেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের সমিতিগুলোর নেতাদের সঙ্গে। সেখানে গৃহিত একটি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ‘যশোর লকডাউন করা হয়েছে’ বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
যশোর টাউন নামক এক ফেসবুক পেজ থেকে, পরবর্তীতে সেটা মুছে ফেলা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে বিকেল চারটায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে একটি বিশেষ সভা ডাকেন; যেখানে পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন, পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুও উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলের সভায় ব্যবসায়ী নেতা এবং গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বলা হয়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মূলত মানুষের মাধ্যমে। সেই কারণে যেসব এলাকায় জনসমাগম বেশি, সেখান থেকে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কাও বেশি। যশোরে বড়বাজারই হলো সবচেয়ে জনসমাগমের স্থান। এই স্থানে কীভাবে জনসমাগম কমানো যায়, তা ভাবতে হবে।
সভায় জানানো হয়, যশোরে করোনা পরিস্থিতি এখনো বেশ ভালো। এখনো পর্যন্ত এই জেলায় কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হননি। তা সত্ত্বেও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন যেকোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধ রয়েছে। কমিউনিটি হল, পৌরপার্কও বন্ধ করা হয়েছে।
সভায় ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে প্রায় সবাই কয়েকদিনের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেন। তাদের যুক্তি হলো, আগে নিজে বাঁচতে হবে, মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে। বেঁচে থাকলে ব্যবসা হবে। তবে কাঁচাবাজার, ফার্মেসি, মুদি দোকানের মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার পক্ষে মত দেন সবাই।
ব্যবসায়ীদের কোনো কোনো নেতা গোটা যশোর জেলায় একই পদ্ধতি অবলম্বনের আহ্বান জানান।
সভায় প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। আলোচনা হয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে গরিব যাতে শ্রমিক-কর্মচারীরা বিপাকে না পড়েন, সেই বিষয়েও।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যশোরের সব দোকানপাট, কাঁচাবাজার খোলা, গণপরিবহন চালু থাকবে। তবে বিপুল জনসমাগমস্থল বড়বাজারের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। ওই এলাকার যেসব প্রতিষ্ঠান সর্বক্ষণ খোলা রাখা জরুরি নয়, তেমন দোকানপাট দিনের কিছু সময় করে বন্ধ রাখা হবে। কোন ধরনের দোকান কতসময় বন্ধ থাকবে, তা নির্ধারণ করবে ব্যবসায়ী সমিতিগুলো।
সভায় পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের অন্যতম ‘ভ্যাকসিন’ হচ্ছে সচেতনতা। ব্যক্তিপর্যায়ে সবাই সচেতন হলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। তাই সবাইকে সচেতন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন থাকার পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশও পরিস্কার রাখতে হবে।
বিনাকারণে বাড়ি থেকে না বেরুনোর জন্য তিনি যশোরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।