স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে যাদের কোনো কর্ম-পরিকল্পনা ছিল না, যারা স্বাধীনতার কথা চিন্তাও করেনি, তারা আজ স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সব কৃতিত্ব হাইজ্যাক করে বসে আছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, আজ আমরা অনেকটাই পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশে কী রাজনীতি চলছে, কারা আমাদের এই স্বকীয় স্বাধীনতা হরণ করছে, কারা ব্যাংক লুট করছে, কারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করছে, এটা সবাই জানে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির সবচেয়ে বড় গৌরবের বিষয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুঃখের বিষয় ৫৩ বছরে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাসকে অনেক বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতাগ্রন্থ রচনার মতো করে ইতিহাসও প্রতিদিনই রচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ২৫ মার্চে ভয়াবহ ক্র্যাকডাউনের পর দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে চট্টগ্রাম থেকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণা দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে, বিশ্ববাসী এ সম্পর্কে জেনেছে। জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরূপ মন্তব্যের উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, এটিকে নিয়ে শাসক দল অনেক মশকরা করে থাকে- জিয়াউর রহমান অসীম সাহসী একজন যোদ্ধা ছিলেন, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির জন্য দায়ী। ২৫ মার্চের পর শুরু হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম। এটি খুব কঠিন। লাখ লাখ মানুষ তার জীবন ও রক্ত দিয়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। এই অংশটি সম্পর্কে শাসক দল নীরব। কারণ সেখানে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা যদি প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ না হতেন। তবে আজও দেশ পাকিস্তান থাকত। কারণ পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীর অস্ত্রের সামনে দাঁড়ানোর মতো নিরস্ত্র বাঙালির কাছে কোনো হাতিয়ার ছিল না।
রবিবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুলনা বিএনপির তিনদিনের কর্মসুচির শেষ দিনে “স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে শহীদ জিয়া বীর উত্তম এর অবদান” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মেজর হাফিজ আরো বলেন, জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে ক্ষমতাসীনদের কথা বলার রাজনীতি বন্ধ হতো। বিএনপি হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। বিএনপি জনগণের অধিকার নিয়ে রাজনীতি করে। বিএনপির ওপর গত সতেরো বছরে যেই পরিমাণ নিপীড়ন হয়েছে, তা অন্য কোনো দলের সঙ্গে হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মেজর হাফিজ বলেন, যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কথা শুনি তখন খুব বেদনার্ত হই। আওয়ামী লীগ তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। তারা চেয়েছিল পাকিস্তানের অখণ্ডতা। অন্যদিকে নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন একজন সৈনিক মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং যুদ্ধ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি নিজেও রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। দেশবাসী যখন একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর শুনতে চেয়েছিলেন সেটিই প্রমাণ করেছিলেন মেজর জিয়া। বিএনপির নেতৃত্বে যে গণন্দোলন চলছে সে আন্দোলনের মাধ্যমে চোরের দ কে বিতারিত করে গনতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আবারো বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন ইনশাল্লাহ।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মেহেদী মাসুদ রুমি, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের কেন্দ্রীয়সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, বিএনপি খুলনা জেলা শাখার আহবায়ক আমীর এজাজ খান প্রমূখ। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলার যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবুর সভায় জাতীয় ও স্থানীয় বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে প্রেসক্লাব ক্যম্পাসে বই প্রদশনি অনুষ্ঠিত হয়।