মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আসা গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন। বিষয়টি বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধকে প্রশস্ত করবে বলে ধরনা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প বলেছেন, এই শুল্ক আগামী বুধবার (২ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে। তবে যন্ত্রাংশের ওপর কর মে মাস বা তার পরে শুরু হবে।
বুধবার (২৬ মার্চ) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানিকারক ও মিত্র দেশগুলোকে বেশ হতাশই করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই শুল্কের মাধ্যমে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো থেকে আমাদের অর্থ ‘ফিরিয়ে আনা’ হবে। কারণ, তারা ‘আমাদের চাকরি ও আমাদের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে।’
ওভাল অফিসে তিনি আরও বলেন, ‘শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে তারা আমাদের দেশ থেকে অনেক কিছু নিয়ে গেছে এবং সত্যি বলতে, শত্রুর চেয়ে বন্ধুরাই অনেক সময় বেশি খারাপ ছিল।’
গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শুল্ক আরোপকে ‘খুবই সামান্য’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি এই পদক্ষেপকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, এই শুল্ক ‘এমন প্রবৃদ্ধি ঘটাবে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’
বিবিসি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, আগামী ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই শুল্ক মার্কিন গাড়ি শিল্পকে ‘সুরক্ষিত ও শক্তিশালী’ করবে। এই শিল্প ‘অতিরিক্ত আমদানির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং আমেরিকার অভ্যন্তরীণ শিল্প ভিত্তি ও সরবরাহ চেইনকে হুমকির মুখে ফেলেছে’ বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও জাপানসহ প্রধান বাণিজ্য অংশীদারেরা নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন বলেন, এই শুল্ক ‘ব্যবসার জন্য খারাপ’ এবং ‘ভোক্তাদের জন্য আরও খারাপ।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা পোস্টে ভন ডার লেয়ন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজ অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা অব্যাহত রাখবে।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই পদক্ষেপকে কানাডার শ্রমিকদের ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শ্রমিকদের রক্ষা করব। আমরা আমাদের কোম্পানিগুলোকে রক্ষা করব। আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করব এবং আমরা তা একসঙ্গে রক্ষা করব।’
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, তার সরকার এই শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ বিবেচনা করবে। জাপানের পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে ইশিবা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই, আমরা সমস্ত বিকল্প বিবেচনা করব। মূল কথা হলো, আমাদের বিবেচনা করতে হবে জাপানের জাতীয় স্বার্থের জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো।’
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী গাড়ি শিল্পে, বিশেষ করে-উত্তর আমেরিকার বাজারে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কারণ, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার গাড়ি নির্মাতার কয়েক দশক ধরে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের ফলে অত্যন্ত সমন্বিত সরবরাহ চেইন গড়ে তুলেছে।
মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক ফোর্ড, জেনারেল মোটরস ও স্টেলান্টিসের প্রতিনিধিত্বকারী আমেরিকান অটোমোটিভ পলিসি কাউন্সিল (এএপিসি) বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমেরিকানদের উপকারের জন্য ‘টেকসই নীতি’ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবে।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে ২১৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যাত্রীবাহী গাড়ি আমদানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানিকারক শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—মেক্সিকো, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও জার্মানির মতো ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও মিত্ররা।