ব্রিটেনের রাজপুত্র প্রিন্স চার্লস ও তার স্ত্রী সাবেক প্রিন্সেস ডায়ানার কনিষ্ঠ সন্তান এবং দেশটির রাজ সিংহাসনের ষষ্ঠ উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারি শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি এবং তার স্ত্রী মেগান মার্কেল রাজপরিবার থেকে ‘বিদায় নিয়েছেন’— বলে সংবাদমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো সঠিক নয়।
তিনি এবং তার স্ত্রী রাজপরিবার থেকে বিদায় নেননি, বরং ‘পিছু হটেছেন’ এবং এই পিছু হটার প্রধান কারণ ব্রিটেনের ‘বিষাক্ত’ সাংবাদমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন টক শো ‘লেট লেট শো’র উপস্থাপক জেমস কর্ডেনকে এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ব্রিটিশ রাজপুত্র।
শুক্রবারের ওই সাক্ষাৎকারে কর্ডেনের প্রশ্নের উত্তরে প্রিন্স হ্যারি বলেন, ‘…এটা ছেড়ে যাওয়া নয়। আমি এবং আমার স্ত্রী কখনই আমাদের পরিবার ছেড়ে যাইনি। আমরা যে আলাদা হয়েছি…আপনি একে ছেড়ে যাওয়ার পরিবর্তে পিছু হটা বলতে পারেন। সেখানকার পরিস্থিতি এমন রূপ নিচ্ছিল যে আমরা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।’
২০২০ সালে প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান মার্কেল জানিয়েছিলেন, তারা রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিকতা থেকে দূরে থাকতে চান। তাদের এই ঘোষণাকে বিদ্রুপ করে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমগুলো ‘মেক্সিট’ অ্যাখ্যা দিয়েছিল।
তারপর গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনের সিংহাসনে আসীন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে প্রিন্স হ্যারি বলেছেন— তিনি ও তার স্ত্রী রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে চিরতরে সরে যেতে চান।
ওই প্রতিবেদনগুলোতে আরো বলা হয়, রানি তার কনিষ্ঠ নাতির ইচ্ছায় সম্মতি দিয়েছেন এবং ডিউক অব সাসেক্স (প্রিন্স হ্যারি) ও ডাচেস অব সাসেক্সকে (মেগান মার্কেল) তাদের রাজকীয় উপাধি এবং রাজপরিবার থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি বলেন, ‘ব্রিটিশ সাংবাদমাধ্যমগুলোর বৈশিষ্ট্য কেমন— আমরা সবাই জানি…আমার মানসিক স্বাস্থ্য ধ্বংস করে দিচ্ছিল ওগুলো। মনে হচ্ছিল তারা আমাকে বিষ প্রয়োগ করছে। এ কারণে আমি তাই করেছি যা বাবা এবং স্বামী হিসেবে একজন পুরুষের করা উচিত। আমার স্ত্রী সন্তানকে ওই বিষাক্ত পরিবেশ থেকে বের করে নেওয়া খুব জরুরি ছিল।’
২০১৯ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন ৩৬ বছর বয়সী প্রিন্স হ্যারি এবং তার ৩৯ বছর বয়সী স্ত্রী মেগান মার্কেল। একটি পুত্রসন্তান রয়েছে এই দম্পতির ঘরে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এই দম্পতির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন হ্যারি-মেগান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মেগানের বাবা শ্বেতাঙ্গ হলেও মা আফ্রিকান-আমেরিকান, অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গ। ব্রিটেনের রাজপুত্রের সঙ্গে একজন মিশ্র রক্তের নারীর বিয়ে সহজভাবে নেয়নি দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে এই দম্পতি অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের প্রতি হিংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং মনগড়া সংবাদ পরিবেশনের জন্য ব্রিটেনের একাধিক পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন হ্যারি-মেগান।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ১০ বছর চাকরি করা প্রিন্স হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটা সত্য যে রাজকীয় দায়িত্ব পালনের চেয়ে সরকারি চাকরি করা আমার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক, তবে রাজপরিবারের দায়িত্ব আমি ছেড়ে দিচ্ছি— এটা সম্পূর্ণ ভুল এবং মনগড়া তথ্য।’