একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১১ টায় রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে রামপাল সদরে অবস্থিত আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গত (৮ মে) সারাদেশে ১৩৯ টি উপজেলায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে প্রথম ধাপে রামপাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এরমধ্যে (আনারস) প্রতীকের প্রার্থী সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন ও (কাপপিরিচ) প্রতীকের প্রার্থী এস. এম. জামিল হাসান (জামু)’র সাথে ভোটে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হওয়ার পরে (আনারস) প্রতীকের প্রার্থী ২৪৯ ভোটে ব্যবধানে জয়লাভ করে।
এদিন রাতে উপজেলার মোট ১০ টি ইউনিয়নের ৪৯ টি কেন্দ্রের ভোটের প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল ঘোষনা করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আব্দুস সাত্তার।
নির্বাচনের পরের দিন দেশের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ায় রামপাল উপজেলা পরিষদে অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহনমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে (আনারস) প্রতীকের জয় লাভের খবর প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ের মধ্যে কোন কেন্দ্রে কোন রকম অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা বা সামান্যতম অপ্রীতিকর ঘটনা কোথাও ঘটেনি। এ ধরনের কোন অভিযোগ ও শোনা যায়নি। বা অনিয়ম সংক্রান্ত কোন অভিযোগ উপজেলা রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে কোন প্রার্থী সেদিন করেনি। রামপালের ইতিহাসে এমন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পূর্বে কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।
ইতোমধ্যে লক্ষ করা গেছে যে, রামপাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে (কাপপিরিচ) প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী এস. এম. জামিল হাসান (জামু) নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করার এক দিন পরে একটি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। যা অগ্রহনযোগ্য এবং একই সাথে হাস্যকরও বটে।
কারণ আমরা জানি যে, যেকোন নির্বাচনে অনিয়ম বা কারচুপির ঘটনা ঘটলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সেদিনই নির্বাচন বর্জন করে অথবা সংবাদ সম্মেলন করে মিডিয়ার সামনে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে। কিন্তু, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার একদিন পরে মনগড়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে রামপালেই আমরা এই প্রথম দেখতে পেলাম।
লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, উপজেলা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহনমূলক এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত করার লক্ষে রামপালে বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত পরিমানে সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছিলো।নির্বাচনে রামপালের দশটি ইউনিয়নে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এ উপজেলায় ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো, যারা সার্বক্ষনিক সতর্কবস্থায় থেকে সূচারুরূপে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষ অফিসারদের দিয়ে ৪৯ টি কেন্দ্রে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে ভোট গ্রহন করে শান্তিপুর্ণ ভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও এ ধরনের ইতিহাস সৃষ্টিকারি, নজিরবিহীন সচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে আপত্তি এবং অভিযোগ তোলাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আমরা মনে করি। যা রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।
এধরনের উদ্ধত্ব প্রচলিত আইনের প্রতি বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শনের শামিল। যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগ এ ধরনের উদ্ধত্বপূর্ণ, যড়যন্ত্রমুলক এবং ঘৃণ্য কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সাথে সাথে দল এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর এধরনের রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত এবং ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের কঠিন শাস্তি দাবি করছে। যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোল্লা আব্দুর রউফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোজাফফর হোসেন, অধ্যক্ষ(অবঃ) মোতাহার রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল হক লিপন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসাঃ হোসনেয়ারা মিলি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ হামীম নূরী, ইউপি চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার, মোঃ আব্দুল্লাহ ফকির, সুলতানা পারভীন, মোঃ নাসির উদ্দীন হাওলাদার, তালুকদার সাব্বির আহমেদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আক্তারুজ্জামান, গাজী গিয়াস উদ্দিন, শেখ নুরুল আমিন, শ্রমিক লীগের সভাপতি আশরাফুল আযম আকুঞ্জি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সরদার বোরহান উদ্দিন, ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ হাফিজুর রহমানসহ সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করার কারণে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলটি সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শেষ হয়। এসময় বক্তারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া দ্বিতীয় বারের মত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেখ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নির্বাচিত করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।