রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের কৈগর্দাসকাঠি চর এলাকায় প্রায় দেড় হাজারের মতো ভুমিহীন পরিবার একটি দুষ্ট চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের ভয়ে ওই এলাকা থেকে গত একমাসে শতাধিক মানুষ পালিয়ে গেছে। অনেকে নিরাপত্তার অভাবে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবী করেছে। ইউপি নির্বাচন কে ঘিরে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবী করেছেন।
শনিবার সকালে উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে বিবাদমান দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কঠোরভাবে হুশিয়ার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন ও থানা ইনচার্জ মো. সামসুদ্দিন।
সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে ভুমিহীনদের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পশুর নদীর তীরে রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউয়িনে অবস্থিত একটি আলোচিত এলাকার নাম কৈগর্দাসকাঠি চর। সরকারি মালিকানাধীন এই বিশাল চরে বর্তমানে দেড় হাজারের মতো ভুমিহীন পরিবার ভুমি ডিসিআর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। স্থানীয় একটি দুষ্টচক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই দেড় সহশ্রাধিক পরিবার। নাম প্রকাশ না করে ওই চরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে এমন বেশ কয়েটি পরিবারের লোকজন বলেন, সরকার বদলের সাথে সাথে ওই চরের দুষ্টচক্রেরও বদল হয় এই বিশাল চর। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের ছত্র ছায়ায় গড়ে ওঠে এক একটি চক্র। তারা আমাদের জিম্মি করে লাভবান হয়। আর আমরা গরীব নিরপরাধ। আমরা কষ্ট করে ঘেরে মাছ ছেড়ে বড় করি আর তারা রাতে এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা ভয়ে কথা বলতে পারি না। ছেলে মেয়ে নিয়ে আমরা কি ভাবে বাঁচবো তা বুঝতে পারছিনা। রাস্তা- ঘাট বিহিন দুর্গম এলাকায় সহসা জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের তেমন কোন যাতায়াত নেই। আর এই সুযোগে দুষ্ট চক্রটি ভুমিহীনদের জিম্মি করে লুটেপুটে খাচ্ছে। কথা হয় কৈগর্দাসকাঠি সাইক্লোন সেল্টারের পাশে বসা জনা বিশেক নারী ও পুরুষের সাথে। তারা বলেন, আগে এই চর নিয়ন্ত্রন করতো জামাল। তাকে মারপীট করে তাড়িয়ে দিয়ে এখন নিয়ন্ত্রন নিয়েছেন বনদস্যু আ. হান্নান, উজ্জল, হানিফ, ইনা গাজী, রফিকুল সহ একটি চক্র। তবে অভিযুক্ত হান্নান, উজ্জল ও এনা গাজী তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আব্দুল হান্নান উল্টো অভিযোগ করে বলেন আমার বাড়ি ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। আমি এখন বাড়ি ঘরে থাকতে পারছিনা। জানা গেছে, গত একমাসে তারা অসংখ্য ঘের থেকে জোর করে রাতে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এখনও ধরছে। মারধরের ভয়ে লোকজন কথা বলতে পারছেনা। ওই চরে বসবাস করা এমন একজন ভুমিহীন নারী মোবাইল ফোনে জানান, আমার স্বামীকে মারপীট করে চর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ঘের দখল করে নেওয়া হয়েছে। আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আমার স্বামীর ঘের রক্ষা করতে হলে এক লাখ টাকা দিতে হবে এই চরের হান্নান, উজ্জল, কালা নুরোল, চম্পাকে। আমি টাকা দিতে পারিনি তাই পালিয়ে এসেছি। এদিকে কৈগর্দাসকাঠির চরের ভূমিহীনদের জিম্মি করে রেখেছে একটি চক্রের বিষয় প্রসংগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন প্রাপ্ত রাজিব সর্দারের সমার্থকদের প্রতি ইংগিত করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তফশিল ঘোষনার পর অতি উৎসাহি হয়ে তার কিছু লোক কৈগর্দাসকাঠি, কাপাসডাংগা, বর্ণি, গৌরম্ভা ও ছায়রাবাদ এলাকায় আমার সমার্থকদের উপর হামলা ও ঘের লুটপাট করেছে।
এ ব্যাপারে রাজীব সরদার বলেন, আমি সন্ত্রাসের রাজনীতি করিনা। যারা এসব কাজ করছে তারা আমার কোন লোক নয়। তারা সুযোগ বুঝে অপকর্ম করে আমার দূর্নাম ছড়াচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমি এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অপর দিকে গত ৮ এপ্রিল রামপাল উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভায় এবিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়। রামপাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সামসুদ্দিন বলেন, শনিবার সকালে আমি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় গৌরম্ভা গিয়েছিলাম বিবাদ মন উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেছি। গৌরম্ভা এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী গিয়াস উদ্দিন ও নৌকা প্রতীক পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মো রাজীব সরদারসহ গন্যমান্য ব্যক্তির সাথে মত বিনিময় করেছি। কেউ আইন হাতে নিলে তাকে ক্ষমা করা হবেনা। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ উপজেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।