হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহনগরের সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হককে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের প্রথম দিনেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। দিয়েছেন নানা বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশিদ।
তিনি জানান, তাবলীগের সাদপন্থীদের মারধরের কথা স্বীকার করেছেন মামুনুল হক। জোশের কারণে ওয়াজ মাহফিলের বক্তৃতায় বিশিষ্ট নাগরিকদের মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি জানিয়েছেন, তিনি কওমি মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। হেফাজতের নেতাকর্মীদের উসকানি দিতেন মামুনুল। তিনি বলতেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে হেফাজতের সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।
এর আগে আজ দুপুর পৌনে ১২টায় সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নাশকতার ঘটনায় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাইবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গত ২৫ ও ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও ও হত্যার মতো নাশকতা ঘটনো হয়। এতে মামুনুলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, সেসব মামলায়ও তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক তাণ্ডবের ১৮টিসহ ২৩ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
সিআইডি প্রধান বলেন, আমাদের ফরেনসিক আছে, সাইবার পুলিশ আছে। যত ধরনের বিষেশজ্ঞ তদন্তের কাজে ব্যবহৃত হয় এইগুলো সবই সিআইডির আছে। এর ফলে আমরা আমাদের কাজগুলো করে বাকি পুলিশেদের সাপোর্ট দিতে পারি।
মাহবুব আলম বলেন, ‘মামুনুল হক রিমান্ডে বিয়েসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রয়েল রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়া নারী সম্পর্কে মামুনুল হক বলেছেন, ‘প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ওই বিষয়ে জেনে গেলে অন্যরকম হতে পারতো। এ কারণে ওই সময় জান্নাতকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করি।’ এসব বিয়ের সময় কারা সাক্ষী ছিলেন তাদের তথ্যও দিয়েছেন মামুনুল হক। যাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, মামুনুল হক রিমান্ডের প্রথম দিনে হেফাজতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের ঘটনার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।’
এর আগে সোমবার (১৯ এপ্রিল) মামুনুলকে আদালতে তোলা হয়। আগেই তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ।