চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘরে থাকার মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। আগামী ৭ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত নতুন করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সোমবার (৪ মে) আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আদেশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর বিস্তার রোধকল্পে সরকার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৫ মে’র পর শর্তসাপেক্ষে বিদ্যমান সাধারণ ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৭ থেকে ১৪ মে তারিখ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। ৬ মে বুদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটি, ৮ ও ৯ মে এবং ১৪ ও ১৫ মের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ছুটিকালীন জনসাধারণ ও সবে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জারি করা নির্দেশমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। জরুরি পরিষেবা, যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এর বাইরে থাকবেন।
সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে।
ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রণীত বিভিন্ন শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীসময়ে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।
সাধারণ ছুটিকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। রমজান, ঈদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিস প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেইসঙ্গে তারা তাদের অধিক্ষেত্রের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। ঈদ-উল-ফিতরের সরকারি ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না।
সাধারণ ছুটিকালীন জরুরি পরিষেবা ছাড়াও গণপরিবহন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ইতোমধ্যেই পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শিল্প কারখানাও খোলা যাবে বলে রোববার জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ছুটিতে জরুরি কাজে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ খোলা রাখা হয়েছে। সীমিত পরিসরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দপ্তরগুলো ছাড়াও মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো খোলা রাখা থাকছে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। পাশাপাশি সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলে বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে।
এরপর সেই ‘ছুটির’ মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়। গত ১০ এপ্রিলের আদেশে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ১৭ মার্চ থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে।
ছুটি ফের বাড়ায় করোনার কারণে দেশে টানা ৫২ দিন ছুটি থাকবে। সোমবার (৪ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে জানানো হয়, মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৮২ জনের মৃত্যু হলো। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৮৮ জন। এতে দেশে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ১৪৩ জনে।