মংলা প্রতিনিধিঃ
লবণ আবহাওয়া অধ্যুষিত মোংলাসহ আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের পৌরসভায় পানি শোধন ও সরবরাহ কেন্দ্রের পুকুরের পানি তলানিতে ঠেকেছে। এ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা পানিতে প্রচ- দুর্গন্ধ আসায় মানুষ তা তেমন ব্যবহার করতে পারছে না। গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলোও প্রায় শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টির দেখা নেই। এ অবস্থায় সুপেয় পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে এ এলাকার কয়েক লাখ অধিবাসী। মিষ্টি পানির সঙ্কটে মানুষের ভোগান্তি আর কষ্টের শেষ থাকছে না। পৌরবাসীদের অভিযোগ, পানি শোধনাগার কেন্দ্র থেকে পৌরসভায় যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা নোংরা ও ময়লা মিশ্রিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় তা খাবার অযোগ্য। এ দিয়ে শুধু গোসল ও নিত্য ব্যবহার্য কাজ করা যায়। এদিকে সুপেয় পানির অভাবে মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করায় এলাকায় ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লবণ পানি অধ্যুষিত মোংলা পৌরবাসীর সুপেয় পানির সঙ্কট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৫ সালে পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি উত্তোলন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে পৌরসভার মাছমারা এলাকায় ৮৪ একর জায়গায় পাঁচ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি উচ্চ জলাধার, ৪৬ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার একটি পানি শোধন ও সরবরাহ কেন্দ্রের কাজ শুরু করা হয়। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। ছয় বছর ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ পৌর এলাকার ২ হাজার ৫০০ পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সকালে ও বিকেলে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছে। গত মাস থেকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এ সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল করে দেওয়া হয়েছে। পৌর পানি শোধনাগার কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বিশাল পুকুরটির তলানিতে সামান্য পানি আছে। পানি শোধনাগারের পাম্পচালক শাহিন বলেন, পুরাতন পুকুরের কিছু অংশের খননকাজ করায় পানি শুকিয়ে গেছে। তা ছাড়া নদীর পানি এখন অনেক লবণাক্ত। সেই পানি পুকুরে ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
এদিকে পৌর এলাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন অধিকাংশ পুকুর গত কয়েক বছরে বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলায় সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পৌর এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি পুকুরে নাম মাত্র সুপেয় পানি থাকলেও সেখানে নারী-পুরুষ ঘন্টার পর ঘন্টা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে এক কলস করে পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই পানিও শেষের দিকে।
শেহালাবুনিয়া এলাকার গৃহবধূ প্রতিমা রানী, মানসী বিশ্বাস ও ফাতেমা বেগম বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় ওপেন ট্যাপ দেওয়া হয়েছে। তা থেকে পানি আনতে লাইনে দাঁড়াতে হয়, তা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই এই পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ ছাড়া পৌরসভা থেকে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা অনেকটাই খাবার অনুপযোগী বলে পৌরবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, সরবরাহ করা পানির নিয়মিত মাসিক বিল দেওয়া হলেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা ময়লা, নোংরা। এ পানিতে অনেক সময়ই দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। গৃহস্থালি আর গোছল ছাড়া এ পানি খাবারে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সোহান আহম্মেদ বলেন, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নদীর মিষ্টি পানি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুকুরে তোলা হয়। কিন্তু এবার পানি তোলার মৌসুমে পুকুরে পর্যাপ্ত পানি ওঠানো হয়নি। তাই এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের এই শোধনাগার প্রকল্প যারা দেখভাল করছেন, তারা এ বিষয়ে কতটুকু যোগ্য, তা পৌর কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। তা ছাড়া পুকুরে মাছ চাষ করে সেই মাছ ধরতে গিয়েও কিছু পানি কমিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি আমি পৌর মেয়রকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।
পৌরসভার মেয়র আলহাজ মো. জুলফিকার আলী বলেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নতুন একটি পুকুর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে খনন না করেই হস্তান্তরের করার চেষ্ট করছে এবং পুরোনো পুকুরটি পুরো খনন না করে তড়িঘড়ি করে চালু করার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া নদীর পানিতে লবণ বেড়ে গেছে এবং পাইপলাইনের কাজ করছেন। এ কারণে নদী থেকেও পানি তোলা যাচ্ছে না। তবে একটু বৃষ্টি হলেই সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এদিকে পৌর এলাকার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। এসব এলাকায় মিষ্টি পানির উৎস কয়েকটি বড় বড় পুকুরের পানি ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। এসব পুকুরে এখন নাম মাত্র যে পানি রয়েছে তাও অনেকটা লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ কয়েক কিলোমিটার দূর হেঁটে বা ভ্যানে করে খাবার পানি সংগ্রহে মরিয়া হয়ে থাকছে। ইতোমধ্যে লবণ পানির কারণে পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।