নতুন কোটা প্রস্তাবে কুয়েত ৪০ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠাতে চায়। কুয়েত সরকার তার দেশের জনস্যংখ্যার মধ্যে শুধু ১৫ শতাংশ বিদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রাখবে।
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃচাকরি-বাকরি হারিয়ে প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থা ভারতীয় বিদ্যুৎকর্মী শিবু ক্লেমেন্সের। তার বিশ্বাস ছিল, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই তিনি কুয়েতে নতুন করে চাকরি খুঁজে পাবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, এর মধ্যে কুয়েতের নতুন কোটা প্রস্তাবের কথা জানার পর, তার আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে।
কুয়েতের নতুন কোটা প্রস্তাবে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরে যেতে হবে। শুধু ভারতীয় নয়, প্রতিবেশী বাংলাদেশেরও শত শত শ্রমিককে দেশে ফিরতে হবে। বাংলাদেশি শ্রমিকের কোটা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে ৩৮ বছর বয়সী শিবু ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরি হারান। তার মতোই আরও হাজার হাজার ভারতীয় শ্রমিক কুয়েতে চাকরি খুঁইয়েছেন। উপসাগরীয় এ দেশটিতে প্রায় ৪.৪ মিলিয়ন ভারতীয় শ্রমিক রয়েছেন। তারাও চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।
করোনার কারণে কুয়েতের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। তেলের দাম পড়ে গেছে। স্থানীয় বাজারে চাকরি হারিয়েছেন শত শত শ্রমিক। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কুয়েত সরকার চাকরির বাজারে বিদেশিদের অংশগ্রহণ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে প্রায় ৮ লক্ষ ভারতীয়কে কুয়েত ছেড়ে যেতে হবে।
নতুন কোটা প্রস্তাবে কুয়েত ৪০ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠাতে চায়। কুয়েত সরকার তার দেশের জনস্যংখ্যার মধ্যে শুধু ১৫ শতাংশ বিদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রাখবে।
‘আমি উপসাগরীয় দেশটিতে এসেছিলাম আমার ছেলেমেয়েকে আরেকটু উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য,’ টেলিফোনে উপকূলীয় শহর মানগাফ থেকে রয়টার্সকে বলেন শিবু ক্লেমেন্স। ‘কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আমি চাকরিহারা হয়েছি। কুয়েতের এই নতুন আইন এখন আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।’
ফেব্রুয়ারিতে চাকরি হারানোর আগে শিবু মাসে ৪০ হাজার রুপি দেশে পাঠাতেন। ওই টাকাতেই তার স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ের সংসার চলে। তার বাড়ি দক্ষিণ ভারতের কেরালায়; স্ত্রী সন্তান ছাড়াও তার পরিবারে রয়েছেন শাশুড়িসহ আরও কজন আত্মীয়।
কুয়েতে যদিও আইনটি এখনো অনুমোদিত হয়নি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গত মাসে বলেছেন, তিনি তার দেশে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৩ মিলিয়নে সীমিত রাখতে চান।
সংসদের স্পিকার মারজুক আল-ঘানেম প্রস্তাব করেছেন, পর্যায়ক্রমে বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনার। তিনি প্রথমে ৫ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশে এখন আর স্বল্প-দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন নেই। সংসদ আইন চূড়ান্ত করবে এ বছরের শেষ দিকে, অক্টোবর মাসে।
আমাদের সত্যিই রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে
শিবুর স্ত্রী লিটি শিবু বলেন, স্বামী যদি প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে না পারেন, তার একার পক্ষে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়বে।
‘টাকা আসা বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমরা খুবই সংকটের মধ্যে আছি। শিবু প্রতিদিন আমাকে ফোন করে তার দুঃখের কথা জানায়। আমি তাকে সাহায্য করার জন্য আমার কাছে যৎসামান্য যা স্বর্ণ আছে, তাই বিক্রি করে দেব,’ বলেন ২০ বছর বয়সী লিটি ক্লেমেন্স।
‘আমার স্বামী যদি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়, তাহলে আমাদের পথে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন তারা
আন্তর্জাতিক অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের সদস্য ইরুদেয়া রাজন মনে করেন, কুয়েতের নতুন কোটা প্রস্তাবে ভারতের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। কারণ কুয়েতের শ্রমবাজারে বেশির ভাগ ভারতীয় যে ধরনের কাজ করেন, তা বিপদজনক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। এ কাজ কোনোদিনই স্থানীয় কুয়েতিদের দিয়ে করানো সম্ভব হবে না।
এদিকে ভারত সরকার ইতোমধ্যেই কুয়েত ফেরত আসাদের মধ্য থেকে দক্ষ ও আধা-দক্ষদের ভারতের বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে। সঙ্গে তাদের নানা কাজে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রায় ৪০ হাজার ডলারের একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাইরে যাতে নিজেরেই নিজেদের ব্যবসা চালু করতে পারেন, সেই ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
তবে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগে কোনো আশা দেখেন না বিনয় উইলসন। ৪০ বছর বয়সী এই শ্রমিক বলেন, ‘দেশে ফিরে গিয়ে কোনো কাজ পাওয়ার আশা করি না। আর পেলেও তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলা সম্ভব হবে না। লোন করে বাড়ি করেছি, জানি না সেই টাকার শোধ দেব কীভাবে?’
- সূত্র: রয়টার্স