চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোরের শার্শা উপজেলায় ঘুষ না পেয়ে গৃহবধূকে (৩০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনেভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মামলার নথিপত্র হস্তান্তর করা হয়। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পিবিআই যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএমএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শার্শার লক্ষণপুরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার নথিপত্র শুক্রবার দুপুরে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই মোনায়েম হোসেনকে।
এসআই মোনায়েম হোসেন খান বলেন, ‘মামলার কাগজপত্র পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিক্টিমের সঙ্গে কথা বলেছি, আরও কিছু বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এছাড়া মামলার সব ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।’
এর আগে শুক্রবার সকালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের জানান, ভয়ভীতির কারণে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে এসআই খায়রুলের নাম তিনি প্রকাশ করতে পারেননি। তবে, তিনি এসআই খায়রুল এবং অন্য তিন জন আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শার্শার গোড়পাড়া গ্রামের নির্যাতিত ওই নারী শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিকদের সাথে তার বাড়িতে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু খাইরুলকে চিনিই না, খুব ভালোভাবেই চিনি। সে আমার কাছ থেকে দফায় দফায় হাজার হাজার টাকা নিয়েছেন। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে জেলে ভরেছে।’
তাকে চিনলে কেন পুলিশের কর্তাদের কাছে খাইরুলের নাম বলেননি-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন খাইরুলকে আমার সামনে নিয়ে এসেছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল-ইনি ছিলেন কিনা। তখন আমি বিবেচনা করে দেখলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে আমি পারবো না। তাছাড়া খাইরুল আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছে, তার চোখের ভাষায় আমি হুমকি বুঝতে পেরেছিলাম।’
ধর্ষণের সময় এসআই খাইরুল উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা সে সব বলবে। কারণ, তারা আরো ভালো জানে।এসআই খাইরুলসহ আরো যে তিন আসামি রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের শাস্তি দেখে আরো ৫/১০ জন মানুষ যেন এমন অপকর্ম করতে সাহস না পায়।’
এর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, এসআই খায়রুল আলমকে ওই গৃহবধূর সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে চিনতে পারেননি। সেজন্যে তার নাম বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এস আই খায়রুল সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কোনো ভয়ভীতি বা চাপ দেয়া হয়নি।’
আজ কেন ওই নারী ভয়ের কথা বলেছেন-এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘হয়তো কেউ তাকে দিয়ে এখন এসব বলাচ্ছে। হয়তো কেউ ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব করাচ্ছে।’
এদিকে নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সকালে ধর্ষিতার বাড়িতে যান। প্রতিনিধি দলে যশোর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমও উপস্থিত ছিলেন। তারা ধর্ষিতার কাছ থেকে সবিস্তার শুনে তাকে আইনগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।
পরে নিপুণ রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করেছে। নয় মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এই মহামারি থেকে দেশকে মুক্ত করতেই নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আত্মপ্রকাশ।
তিনি বলেন, ‘নির্যাতিত গৃহবধূর মুখ থেকেই সবকিছু শুনেছেন। এসআই খায়রুলসহ চার জনের নাম এসেছে। তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, হাসপাতালে গিয়েছেন, মামলা করেছেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে এসআইকে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে।’
বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে এসআই খাইরুলকে এক নম্বর আসামি করে তাকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শার্শার লক্ষ্মণপুরে ওই গৃহবধূর বাড়িতে যেয়ে এসআই খাইরুল এবং সোর্স কামরুলসহ চারজন ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। না পেয়ে এসআই খাইরুল ও কামরুল তাকে ধর্ষণ করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এজন্যে তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার জন্যে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ওইদিন রাতেই তিনি শার্শা থানায় একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাত একজনসহ চারজনকে আসামি করা হলেও এসআই খাইরুলকে আসামি করা হয় নি। পুলিশ এই ঘটনায় একটি তদন্ত টিম গঠন করে। একই সাথে ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরীক্ষায় গণধর্ষণ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আরিফ আহমেদ। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে ক’জন ওই ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিলেন।