বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের দিন ২১শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে ও ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে যশোরের শার্শা উপজেলার ৭৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার। তাই সরকারি ভাবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন করার নির্দেশনা থাকলেও শ্রদ্ধা জানাতে ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর ধরে সমস্যায় পরছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পোর্ট থানার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। বিশেষ করে উপজেলা ও পোর্ট থানার ৩৩টি মাদরাসার একটিতেও শহীদ মিনার নেই। এছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শা ও বেনাপোলে ২৬৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক ও প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি মিলিয়ে আরো রয়েছে ৫৪টি। এদের মধ্যে মাত্র ২৩টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে ২৭টিতে শহীদ মিনার আছে। ১২ কলেজের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে শহীদ মিনার আছে। ৩৩টি মাদরাসার মধ্যে একটিতেও কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে সব মিলিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে।
উপজেলার নাভারণ বুরুজবাগান ফাজিল মাদরাসার সুপার এ কিউ এম ইসমাইল হোসাইন জানান, মাদরাসাটি ১৯৬৫ সালে নির্মিত হলেও অদ্যবধি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
বেনাপোল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছিল যাদের স্মরণে আজও শার্শা উপজেলায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার গড়ে না উঠায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে পারে না।
নাভারণ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল জানান, আমাদের কলেজের পাশেই হাইস্কুলের শহীদ মিনার থাকায় এখানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যকতা থাকলেও শার্শা-বেনাপোলের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। উপজেলার ১২টি কলেজ, ৩৮টি হাইস্কুল, ৩৩টি মাদরাসা ও অসংখ্য কিন্ডারগার্ডেনের মধ্যে মাত্র ৩৭টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। কিন্তু ৩৩টি মাদরাসার একটিতেও শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে পত্র দেওয়ার পরও তারা নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রি ক্যাডেট এবং কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪টি। ১৮০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬২টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা ও কলেজে শহীদ মিনার না থাকার কথা স্বীকার করে জানান, উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। এটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ স্থানীয় ভাবে নির্মাণ করতে পারে। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি ভাবে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।