শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। এ কর্মসূচির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশ ভালোই সাড়া পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।
শুরু থেকেই উদ্যোগটি সফল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় কাজ করছে অন্যান্য ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবছরই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমার পরিমাণ মোট ১ হাজার ৯২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত এক বছরের হিসাবে ৩০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার আমানত বেড়েছে শিক্ষার্থীদের।
আগের বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ডিসেম্বর (২০১৯) শেষে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬১৪ কোটি ২০ লাখ। আমানতের পাশাপাশি হিসাবের সংখ্যাও বেড়েছে গত বছরে। শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল হাজার ১৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৬৮টি। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ হিসাব সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৪ টিতে। সুতরাং এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৬৬টি।
তথ্য মতে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে সঞ্চয়ের দিক থেকে শহরের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা। গ্রামের শিশুদের জমার পরিমাণ মোট ৪৮০ কোটি ১০ লাখ। অন্যদিকে শহরের শিক্ষার্থীদের জমার পরিমাণ ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
কোমলমতি স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা তা-ই মূলত স্কুল ব্যাংকিং। এ হিসাব থেকে কোনো চার্জ কর্তন করা হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে স্কুল ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। স্কুল ব্যাংকিংয়ে টার্গেট গ্রুপ ১১ থেকে ১৭ বছরের তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো আয়ের উৎস নেই। তারা তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসব এবং পার্বণে উপহার বা নগদ অর্থ পেয়ে থাকে, অথবা নিয়মিতভাবে দুপুরের টিফিন বাবদ যে অর্থ পেয়ে থাকে, তা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে জমা রাখার নিমিত্তে স্কুলের কাছের ব্যাংক শাখায় একটি সেভিংস হিসাব খোলার উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করাই স্কুল ব্যাংকিংয়ের উদ্দেশ্য।
মূলত স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সঞ্চয় করার মনোভাব ও অভ্যাস গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। স্কুল ব্যাংকিং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত রয়েছে। কমনওয়লেথ স্কুল ব্যাংকিং, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে স্কুল ব্যাংকিং একটি জনপ্রিয় সঞ্চয় বৃদ্ধির উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত। ছাত্র-ছাত্রীদের খরচ কমানোর মাধ্যমে সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তোলার নিমিত্তে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের শুরু হয়েছে।
বর্তমানে আমাদের দেশে ৫৫টি ব্যাংকে বিদ্যমান এ স্টুডেন্ট ব্যাংকিং স্কিম। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংক হিসাব চালাতে গ্রাহককে কোনো না কোনো চার্জ দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের এ হিসাব চালাতে কোনো খরচ দিতে হয় না, চেকবই নিতে গুনতে হয় না কোনো মাশুল। জমা বই, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সুবিধা তো রয়েছেই। লেনদেন করা যায় যত খুশি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের আমানত মূলত একটি দীর্ঘস্থায়ী আমানত, যা স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগযোগ্য।