চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃচার বছরের কন্যা আমেনাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর যশোরে মোছা. জুলেখা খাতুন (২৪) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূ জুলেখা শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের আল মামুনের স্ত্রী। তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানা গেছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিকারপুর গ্রামে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ৬ থেকে ৭ মাস আগে লক্ষণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলাউদ্দিন গ্যাদনের মেয়ে জুলি বেগমের (২২) একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে যায়। এরপর থেকে ওই চেইনের আর কোনো সন্ধান পাননি তিনি। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে নিহত জুলেখা খাতুনের চার বছরের মেয়ে আমেনা আলাউদ্দিনের দোকানে চকলেট কিনতে যায়। এ সময় জুলি বেগম শিশু আমেনার গলায় থাকা একটি চেইনকে তার হারানো চেইন দাবি করে জোরপূর্বক তা খুলে নেয়।
এ ঘটনার জেরে জুলি বেগম শিকারপুর গ্রামের আল মামুনের বাড়িতে আসে। এ সময় মামুনের স্ত্রী জুলেখার কাছে চেইনটি তাদের হওয়ার প্রমাণ চান জুলি বেগম। ফলে এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় জুলেখা খাতুন জুলি বেগমকে বলেন, ‘এটি আমার মায়ের গিফট করা চেইন, আমার মা এই স্বর্ণের চেইনটি আমাকে বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার মা ঢাকায় চাকরি করে বিধায় শুক্রবার ছাড়া তিনি এলাকায় আসতে পারবেন না’
এই প্রমাণ যথাযথ মনে না হওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে স্বর্ণের চেইনটি নিয়ে জুলি বেগম তার বাসায় ফিরে যান।
জুলেখার ননদ ও একই গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে সীমা খাতুন জানান, ‘রবিবার সকাল ৮টার দিকে অনেক ডাকাডাকির পরও ঘর থেকে ভাবির কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমার সন্দেহ হয়। এ সময় জানালা দিয়ে উঁকি দিলে আমি ভাবিকে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে থাকতে দেখি। তখন আমার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্য ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। পরে লাশটি নামানোর পর খাটের ওপরে আমার ভাইয়ের মেয়ে আমেনার নিথর দেহটি পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় এলাকাবাসী শার্শা থানা ও স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে খবর দেয়।’
জুলেখার স্বামী আল মামুন বলেন, ‘আমার শাশুড়ি রোজার মাসে আমার স্ত্রীকে একটি স্বর্ণের চেইন দিয়েছে। সে ব্যাপারে আমি অবগত আছি। আমার শাশুড়ি প্রমাণের জন্য শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আসার কথা ছিল। এরই মধ্যে আজ সকালে রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়ার পর আমার ভাইয়ের কলের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।
এ দিকে অন্তঃসত্ত্বা জুলেখাসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা- চুরির অপবাদের বোঝা সইতে না পেরে জুলেখা তার নিজ কন্যা সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর লায় দরি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
গ্রামবাসী এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পর দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান বলেন, ‘লাশ দুটি ময়না তদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জুলি বেগম ও তার মাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।