শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে খুলনায় বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। কলেরা, ডায়রিয়া, নিউমনিয়া ও জ্বর সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। খুলনা শিশু হাসপাতালে গত কয়েক মাসের তুলনায় শীতজনিত কারনে বেড়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালটির বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে সমানতালে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন রোগীরা। কেউ সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন আবার কেউ শিশুদের ভর্তি করছেন হাসপাতালে। তবে শীতের এই সময়ে শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের কারণ হিসেবে অভিভাবকদের নানা অবহেলাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
খুলনা শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা জায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে ডায়রিয়া জনিত কারনে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৪শ’ ১ জন রোগী। সেই মাসেই নিউমনিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১শ’ ১৫ জন এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ১শ’ ২৬ জন। পরবর্তী ডিসেম্বর মাসে শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে রোগীর সংখ্যা। সে মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ৬শ’ ৬১ জন, নিউমনিয়াতে ৭১ জন এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫২ জন রোগী শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। নতুন বছরের চলতি মাসে ডায়রিয়াতে আক্রান্তে সংখ্যা কমলেও বেড়েছে নিউমনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ মাসে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪শ’ ২ জন রোগী। যা গত তিন মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। চলতি মাসে ডায়রিয়ায় ৫৮ জন ও সাধারন জ্বরে ৪৫ জন শিশুরোগী চিকিৎসা নিয়েছে খুলনার শিশু হাসপাতাল থেকে।
শিশু হাসপাতালের কনসালটেন্ট শিশু বিষেশজ্ঞ ডাঃ প্রদীপ দেবনাথ বলেন, শীতজনিত কারনে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশঙ্কাজনক হারে না। শীতের সময় শিশুরা নিউমোনিয়া, জ্বর, কাশি, সর্দি ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুর অভিভাবকদের অসতর্কতার কারনে এগুলো বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতের সময় শিশুদের অনেক বেশী জামা-কাপড় পরানো হয়। সে কারনে শিশুরা ঘেমে যায়, এর ফলে জ্বর বা সর্দি-কাশি হতে পারে। এছাড়াও শীতের তীব্রতা বাড়লেই অভিভাবকরা শিশুদের নিয়মিত গোসল করান না। সে কারনেও শিশুরা অসুস্থ হতে পারে। তাই শিশুর অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন এই বিষেশজ্ঞ।
কথা হয় খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামানের বলেন, প্রতিদিন এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪শ’ ৫০ থেকে ৫শ’ জন রোগী বর্তমানে চিকিৎসা নিতে আসছে। যা গত কয়েক মাস আগেও ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ জনের মধ্যে ছিলো। শীতের সময় শিশুদের লালন-পালন করতে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার কারনে গরম কাপড় পরাতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুরা ঘেমে না যায়। যাদের বয়স ৬ মাসের উপরে তাদের ফল খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে লেবুর রস খুবই উপকারী শিশুদের জন্য। শিশুদের জ্বর হলে তাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে হবে। এ সময়ে শিশুরা ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে তাদের মায়ের দুধ খাওয়ানো সহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করতে হবে। তবে নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও শীতজনিত কারনে হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।