শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি মামলার আসামি না হয়েও ৫ মাস ধরে জেল খাটছেন। তবে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত ৯ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য মামলার প্রকৃত আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান, এ বছরের ২৮ এপ্রিল রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের চা-বাগান রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ ৩০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ রশিদ প্রকাশ খোরশেদ (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সে ইয়াবা ব্যবসায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান জড়িত বলে তথ্য দেন।
পরে পুলিশ আটক রশিদকে নিয়ে ইয়াবা উদ্ধারে গেলে দুইপক্ষের গোলাগুলিতে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং রশিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে রামু থানায় মাদক, অস্ত্র ও হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় পুলিশ নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনসহ কয়েকজন আসামিকে পলাতক দেখান। তবে ওই এজাহারে নুরুল আমিনের পিতার নাম অজ্ঞাত ছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই মামলায় শুধুমাত্র নামের মিল ও মামলার এজাহারে পিতার নাম অজ্ঞাত লেখা থাকায় গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলার আসামি হিসেবে নুরুল আমিনকে আটক করা হয়েছিল। তার গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জারুলিয়াছড়ি গ্রামে। বর্তমানে আসামি না হয়েও কক্সবাজার জেলা কারাগারে কারাভোগ করছেন তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, আটক দুই নুরুল আমিন একই গ্রামের বাসিন্দা। দুজনের পিতার নাম যথাক্রমে নুরুজ্জামান ও মনিরুজ্জামান। প্রথমে আটক নুরুল আমিন নিরপরাধ বলে পরিবার দাবি করেছে। এ বিষয়ে ডিবি পুলিশকে তিনি একটি প্রত্যয়নও দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী স্বীকার করেন, গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ ব্যক্তি প্রকৃত আসামি নয়। গত ৯ ডিসেম্বর রাতে প্রকৃত আসামি নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
নিরাপরাধ নুরুল আমিনের স্ত্রী মোমেনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী কখনও মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন না। দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার চালান। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন নিকটাত্মীয় তার স্বামীকে অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।
তিনি জানান, গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ মাদক মামলার আসামি হিসেবে তার স্বামী দিনমজুর নুরুল আমিনকে আটক করে। ২৬ দিন হাজতবাসের পর আদালত জামিন মঞ্জুর করলেও কক্সবাজার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ফলে প্রায় ৫ মাস ধরে কারাভোগ করছেন তার স্বামী। তবে গত ৯ ডিসেম্বর কক্সবাজার ডিবি পুলিশ মামলার প্রকৃত আসামি নুরুল আমিনকে আটক করেছে বলে শুনেছি।
আইনজীবী শামসুল আলম জানান, আটকের ২৬ দিনের মাথায় আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু কক্সবাজার ডিবির একটি মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। ডিবি পুলিশের মামলার এজাহারে প্রকৃত অপরাধী নুরুল আমিনের পিতা অজ্ঞাত দেখানো হয়েছিল। এ কারণেই হয়তো বিনা অপরাধে দিনমজুর নুরুল আমিন এখনও কারাগারে রয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, নির্ভরযোগ্য তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে নুরুল আমিন নামে এক আসামিকে আটক করা হয়েছিল। সে নিজের অপরাধের বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এখানে আসামি আটকে পুলিশের কোনো ভুল নেই। তবে ডিবি কর্তৃক আটক নুরুল আমিনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
স্থানীয় সূত্রমতে, মামলার প্রকৃত আসামি এলাকায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন নামে পরিচিত। রোহিঙ্গা হলেও শ্বশুর মনিরুজ্জামান ও শাশুড়ি আমিনা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জন্মনিবন্ধন নিয়েছেন। এলাকায় সে মাদক চোরাকারবারি হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে মাদক চোরাকারবারি নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন মনে করে মিয়ানমারের কিছু উপজাতি এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও সে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল। নানা অভিযোগের পরও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় নুরুল আমিন এতদিন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে।