সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় রোববার আদালতে আরও একজনের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। একই সময় ৪ জন সাক্ষী দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সাতক্ষীরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির জনাকীর্ন আদালতে তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। সাক্ষীরা হলেন সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম লাল্টু, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু ও মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন। তাদের নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করা হলো। আদালতে সাক্ষীদের জেরা করা নিয়ে আইনজীবিদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। এসময় আদালত ধৈর্য্য ধারন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে ফের কার্যক্রম শুরু করেন।
সরকারপক্ষে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনির বলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বিএনপি দলীয় এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। সাক্ষ্যপ্রমানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হলে আসামীরা আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে। তিনি আরও বলেন, ১৮ বছর পর এই মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহন করা হয়েছে। সোমবার আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহন করা হতে পারে।
অপরদিকে আসামীদের পক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য খন্ডন করে বলেন, মামলার বিবরনে যা বলা হয়েছে সেদিন এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। বিরোধীদলীয় নেত্রী কলারোয়া ছেড়ে চলে যাবার পর আওয়ামীলীগ বিএনপি এবং পরে কয়েকজন সাংবাদিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, এই মামলায় এখনকার কয়েকজন সাক্ষী আগেই জানিয়েছিলেন এ ঘটনা ঘটেনি। এখন তারা উল্টো কথা বলছেন। এ নিয়ে কেন তারা জিডি করেননি এই প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকার আমলে মামলার বাদী মামলা নিয়ে শুনানী করেননি। ২০১৪ সালে এসে খারিজ হওয়া এই মামলা পুনরুজ্জীবিত করে ২০২০ সালে মামলাটি পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব সাতক্ষীরায় ছিলেন না বলে সাক্ষীদের জবানবন্দীতে প্রমান পাওয়া গেছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের মামলা পরিচালনার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এ দায়িত্ব সাতক্ষীরার পাবলিক প্রসিকিউটরের। অতি উৎসাহী হয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মামলা পরিচালনা করতে সাতক্ষীরায় বারবার আসছেন। ন্যায়বিচার হলে হাবিবুল ইসলাম হাবিব সহ ৫০ জন আসামীর সবাই খালাস পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাক্ষ্য দিতে আসা বিরোধীদলীয় নেতার সফরসঙ্গী, ক্যামেরাপার্সন শহীদুল হক জীবন বলেন, তিনি সেদিন যা যা দেখেছেন তা আদালতকে বলেছেন এবং জেরা হলে একই কথা বলবেন।
বিরোধীদলীয় নেতার অপর সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় সৈনিক লীগ নেতা সরদার মুজিব বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে হাওয়া ভবন থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিরোধী দলীয় নেতার ওপর হামলার। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি যাবতীয় তথ্য আদালতে তুলে ধরেছেন।
সরকারপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুধীন চ্যাটার্জী, এএজি শাহীন মৃধা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং সাতক্ষীরার পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ। অন্যদিকে আসামীপক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাতক্ষীরার অ্যাড. আব্দুল মজিদ ও শহীদুল ইসলাম পিন্টু সহ অন্যরা।