চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে চালের বাজার। এদিকে সংকটের অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এক শ্রেণী অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলাররা (মিল মালিক)। অধিক লাভের আশায় সিন্ডিকেট ও কারসাজির মাধ্যমে ইচ্ছা মাফিক বাড়িয়ে দিয়েছে চালের দাম ভোক্তাদের পকেট কাটছে ব্যবসায়ীরা। পাইকারীর চেয়ে খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য অনেক বেশি। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে আট টাকারও বেশি।
সরজমিনে গতকাল সোমবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ২৮ থেকে ৩০ টাকা, ২৮ বালাম ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, মিনিকেট (ভালোমানের) ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট (নিম্নমানের) ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, বাসমতি ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ একসপ্তাহ আগে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ২৪ থেকে ২৬ টাকা, ২৮ বালাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা, মিনিকেট (ভালোমানের) ৪০ থেকে ৪২ টাকা, মিনিকেট (নিম্নমানের) ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, বাসমতি ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অপর দিকে নগরীর বড় বাজারে (পাইকারী) প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ২৫ থেকে ২৬ টাকা, ২৮ বালাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা, মিনিকেট (ভালোমানের) ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, মিনিকেট (নিম্নমানের) ৪০ থেকে ৪২ টাকা, বাসমতি ৪৮ টাকা।
গত রবিবার সকালে খাদ্য ভবনে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার পেঁয়াজের মতো চালের দামও যেন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে না যায়, সে ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন ।
একাধিক পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, এক সপ্তাহ আগেও যে দামে চাল বিক্রি করেছি, এখন তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ মিল থেকে আমাদের কেজি প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। একাধিক ভোক্তা বলেন, চালের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এদিকে চালের দাম নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
খুচরা ব্যবসায়ী মোঃ খায়রুল আলম বলেন, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। গত ৮/৯ দিনের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ৮/৯ দিন আগে যে মিনিকেট (ভালো মানের) চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। একই ভাবে যে বাসমতি চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। নগরীর বড় বাজারে আসা ক্রেতা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৮ থেকে ৯ টাকা বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, চালের দাম নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এর পরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সংশ্লি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। এছাড়া আরো অনেকের সাথে কথা বললে তারা চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া বাজার এলাকার জমজম অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মিলার মোঃ আলী হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা ধান বিক্রি বন্ধ করে দেয়। ঝড়ের আগে মোটা ইরি ধান মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে। মোটা ইরি ধানের দাম বেড়ে ৬৪০ টাকা হওয়ায় গত সোমবার থেকে কৃষকরা পুনরায় ধান বিক্রি শুরু করেছে।’
নগরীর বড় বাজারের মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ আব্দুর রব শেখ বলেন, ‘বাজারে চালের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মিলাররা অধিক লাভের আশায় চাহিদার তুলনায় চাল সরবরাহ করছে না। মিলাররা বেশি দামে চাল বিক্রি করছে, বিধায় দাম বৃদ্ধির প্রভার পড়েছে পাইকারী বাজারে।’ নগরীর বড় বাজারের মেসার্স দিনাজপুর ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মোঃ ফারুক শেখ বলেন, ‘মিল মালিকদের কারসাজির কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজিদরে চাল কিনবে। এমন খবর পেয়ে মিল মালিকরা আগেভাগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এ কারণে পাইকারী বাজারেও দাম বেড়েছে।’ উত্তরবঙ্গ খাদ্য ভান্ডারের ম্যানেজার কার্তিক সরকার বলেন, ‘বাজারে চালের সরবরাহ কম তাই চালের দাম বেশি। তিনি আরও বলেন, মিলারদের কারসাজির কারণে চালের দাম বেড়েছে।