সকল ব্যর্থতাকে সফল বলার বিবেকহীন বয়ান প্রদান বন্ধ করা এবং সরকারের চরম গাফিলতি অনুসন্ধানের জন্য ৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে তারা এসব প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, করোনা প্রতিরোধসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য মনগড়া সফলতার বিবেকহীন আত্মপ্রচার সরকারের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। করোনা নিয়ন্ত্রণে আজগুবী সফলতা প্রমাণে পন্ডিতিপনায় সরকার শুরু থেকেই কৌশলে সন্দেহজনকভাবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করে যাচ্ছে। করোনায় আজ পর্যন্ত ঘোষিত ৩২৩৪ জন মানুষের মূল্যবান জীবন ঝরে যাওয়ার পরও সরকারের আত্মতুষ্টির বিবেকহীন নিষ্ঠুর উপাখ্যান জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।
তারা আরও বলেন, গত ৭০ দিনে ‘থাইল্যান্ডে’ একজনেরও মৃত্যু হয়নি তবু সেদেশের সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল বলে উল্লাস প্রকাশ করছে না। আর আমাদের প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল থাকার পরও সরকারের সফলতার মিথ্যাচার নির্মম তামাশার শামিল। এতে বাংলাদেশ ‘অমানবিক’ ও ‘অবিবেচক’ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে চিহ্নিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস সরকারের ‘বিবেক’ এবং ‘লজ্জা’এ দুটোকেই খেয়ে ফেলছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকার বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইন, যথেষ্ট সংখ্যায় করোনা পরীক্ষা, করোনা রোগীদের আইসোলেশন, সক্রিয়ভাবে কন্টাক্ট ট্রেসিং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং লকডাউনসহ কোন কিছু কার্যকর করতে পারেনি। উপরন্তু সরকার গার্মেন্টস খোলা-বন্ধ নিয়ে নাটক, ঈদে বাড়ি যাওয়া নিয়ে নানারকম আদেশ, এবং লকডাউন না করে সারাদেশে অফিস ছুটি ঘোষণা করে সংক্রমণ বিস্তারে বিরাট ভূমিকা পালন করে। এরপর সারা পৃথিবীতে যখন লকডাউন চলছে তখন সীমিত আকারে অফিস খোলা এবং টেকনিক্যাল কমিটির সকল পরামর্শ উপেক্ষা করে মৃত্যু ও সংক্রমণ বিস্তারকে ত্বরান্বিত করে।
এতে জেএসডি নেতারা বলেন, দেশবাসী এখনো ভুলে নাই এবং কোনদিনই ভুলবে না যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতি এটাও ভুলবে না যে নিম্নমানের মাস্ক এবং সুরক্ষা সামগ্রী সরকার কর্তৃক সরবরাহের কারণে করোনার ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মূল্যবান জীবন বলিদান করতে হয়েছে। ফলাফল যা হয়েছে তাহলো মানুষ করোনা আক্রান্ত হলেও আর এখন হাসপাতালে যায় না, সবাই হাসপাতাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। হাসপাতালের বিছানা এখন খালি থাকে, এটাকে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের মাপকাঠি প্রচার করছে – যা নিষ্ঠুরতার নামান্তর।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রত্যক্ষ মদদে যে সকল প্রতিষ্ঠান করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা করার অনুমোদন পেয়েছিল সে সকল প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সনদে অনেক মানুষের মৃত্যু এবং সংক্রমণ বিস্তারে সহায়ক হয়েছে দাবি করে তারা বলেন, সরকার সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েও আজ নির্লজ্জের মতো সাফল্যের বয়ান দিয়ে বিশ্বের কাছে রাষ্ট্রকে উপহাসের পাত্র করে তুলেছে। করোনার ভুয়া সনদ সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধূলিসাৎ করেছে আর করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বয়ান বাংলাদেশকে অবিবেচক আর নিম্নমানের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
সরকারের সফলতার ‘ধোঁকাবাজি’ বন্ধ এবং তার ‘ব্যর্থতার’ দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে ৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জেএসডি: (১) সরকারের ভুলের কারণে কত মানুষের মৃত্যু ও জীবন বিপন্ন হয়েছে,এবং করোনা সংক্রমণ বিস্তার লাভ করেছে তার জন্য ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি’ গঠন;
(২) লণ্ডভণ্ড স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরসহ দুর্নীতিবাজদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা;
(৩) নিম্নমানের মাস্ক এবং সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের কারণে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং
(৪) বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি ও ভুয়া সনদ প্রদানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা।
বিবৃতিতে আ স ম আবদুর রব ও এ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার আরও বলেন, আমরা বহুদিন যাবত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য অবিলম্বে সকল অংশীজন কে নিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল (National Health Council – NHC) গঠন করে আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছি। সুতরাং সাফল্যের মিথ্যা বয়ান বন্ধ করে ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব নির্ধারণ এবং জনগণের জীবন সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।