চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃচুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করার ১৬ বছরেও বাড়ানো হয়নি জনবল। চালু হয়নি জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তার (ইএমও) পদও। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালাতে যখন হিমশিম অবস্থা ঠিক তখনই পদোন্নতিতে ৪ চিকিৎসককে বদলি করা হয়। এতে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক দিয়েই ১০০ শয্যা হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চলছে।
হাসপাতালের মেডিসিন, চক্ষু, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া (আবেদন) বিভাগের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে ১ ডিসেম্বর নতুন কর্মস্থলে বদলি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এ্যানেসথসিয়া বাদে অন্য পদগুলোতে কেউ যোগদান করেননি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান জানান, নভেম্বর মাসে ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সদর হাসপাতালের জনবল সংকটের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার হাসপাতাল ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। তখন থেকে শয্যা অনুযায়ী শুধু ওষুধ সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালটিতে ইএমও পদের কোনো অনুমোদন নেই।
এর আগে ১৯৯৮ সালের ৩ আগস্ট তিনজন ইএমওর পদ সৃষ্টি করে তিনজন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালের ১০ ডিসেম্বর তা বিলুপ্ত করা হয়। ১০০ শয্যার অনুকূলে চিকিৎসকসহ জনবল অনুমোদনপ্রাপ্তির জন্য সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় পত্র দেওয়া হলেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি।
সদর হাসপাতাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাব অনুযায়ী ১০০ শয্যার হাসপাতালে একজন তত্ত্বাবধায়ক, ১০ জন জ্যেষ্ঠ পরামর্শক (সিনিয়র কনসালট্যান্ট), ১১ জন কনিষ্ঠ পরামর্শক (জুনিয়র কনসালট্যান্ট), একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), ছয় জন চিকিৎসা কর্মকর্তা (মেডিকেল অফিসার), ১১ জন সহকারী সার্জন, একজন দন্ত বিশেষজ্ঞ (ডেন্টাল সার্জন) ও একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার (হোমিও) পদ রয়েছে। এই ৪২ জন চিকিৎসক ছাড়াও ১০৮ নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা।
৫০ শয্যার বিপরীতে ছয়জন জ্যেষ্ঠ পরামর্শকের (চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি, শিশু, মেডিসিন ও অর্থো-সার্জারি) ও পাঁচজন কনিষ্ঠ পরামর্শকের (সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া, অর্থো ও ট্রমা, ইএনটি ও রেডিওলজি) এবং একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), পাঁচজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন দন্ত চিকিৎসক, একজন প্যাথলজিস্ট, একজন রেডিওলজিস্ট, একজন হোমিও এবং একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ২২টি পদ রয়েছে। চলতি ডিসেম্বরে ৪ জন বদলি হওয়ার পর ১৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে অর্থো-সার্জারি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শকের পদের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন একজন কনিষ্ঠ পরামর্শক। এছাড়া ইএনটির কনিষ্ঠ পরামর্শক গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরামর্শকের বাকি সব পদই শূণ্য রয়েছে। তবে, আরএমও, চিকিৎসা কর্মকর্তা, দন্ত চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, হোমিও ও আয়ুর্বেদ বিভাগে চিকিৎসক কর্মরত আছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা কানিজ নাঈমাকে ঘিরে রেখেছেন অন্তত ২০ জন রোগী। কয়েকজন ডিপ্লোমা ইন্টার্ন তাকে সহযোগিতা করছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হানুরবাড়াদি গ্রামের ইলিয়াছ হোসেন জানান, সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকলেও দুপুর ১২টায়ও চিকিৎসকের দেখা পাইনি।
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শামীম কবির জানান, মানসম্মত সেবার কারণে সদর হাসপাতাল বর্তমানে সেবাপ্রত্যাশী মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সীমিত জনবল দিয়ে অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগের পাশাপাশি জরুরি বিভাগ চালাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম অবস্থা। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ সব শূণ্যপদে লোকবল নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।