শাহজাহান সিরাজ :: গত ৩ দিন ধরেই খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নেমেছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কখনো কখনো বাড়ছে বৃষ্টির বেগ। কখনো মেঘাচ্ছন্ন আকাশে নেই রোদের দেখা। বিশেষ করে নিচু ক্ষেতে পানি জমে ক্ষতির কবলে পড়েছে সবজি। আর এতেই কপাল পুড়েছে গ্রীস্মকালীন টমেটো, ঢেড়ষ, হলুদ, বেগুন, ওল, কচু, মরিচ, পটল, করলাসহ এই অঞ্চলের গ্রীস্মকালীন সবজি। ইয়াসের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই টানা বৃষ্টিতে কৃষকের সবজি ফলস, মৎস্য ঘের তলিয়ে ও চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা পানিতে ডুবে গিয়ে কয়রার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই অবস্থা না কাটলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রীস্মকালীন টমেটো, ঢেড়ষ, হলুদ, বেগুন, ওল, কচু, মরিচ, পটল, করলাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ হয়েছে। গ্রীস্মকালীন এসব সবজি ক্ষেতে পানি জমে আছে। আবার নদীতে বাঁধ, নেট, পাটা দেওয়া থাকায় পানি নিষ্কাশন ঠিকমত না হওয়ায় ঘের, আমন ধানের বীজতলা সহ সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কয়রা উপজেলার ৪ নং কয়রা গ্রামে সবজি চাষী গোপাল সরদার বলেন, কয়েকদিন আগেও তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছিল সবজির চারাগাছ। কিন্তু চলমান বৃষ্টিতে একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে ক্ষেত। এবার লাভের মুখ দেখার সময় বৃষ্টির পানিতে সব শেষ করে দিল। এখন পাম্প লাগিয়ে পানি সেচতেছি। গোপাল আরো বলেন, এবার ১ বিঘা জমিতে টমেটো, ১ বিঘা জমিতে ঢেড়ষ, ১০ কাটায় বেগুন ও মিষ্টি কুমড়া লাগিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন দিন থেকে বৃষ্টিতে গ্রীস্মকালীন টমেটো ও ঢেড়ষ ক্ষেত সহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে কাদা কাদা হয়ে গেছে। সবজি তুললেই ক্ষেতের আরো ক্ষতি হবে। আবার ঢেড়ষ না তুললে পেকে যাবে।
এছাড়া সূর্য না উঠাই অথ্যাৎ রোদ না থাকায় অনেক গাছ হলুদ হতে শুরু করেছে এবং কিছু মরিচ গাছ মরে গেছে। ২ নং কয়রা গ্রামের রবীন্দ্র ঢালী বলেন, তিনি ১ বিঘা হলুদ ও ১০ কাঠা বেগুন ও ধুন্দল চাষ করেছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টি পাতের ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ গাছ মরে গেছে। সে সব জমিতে পানি জমে আছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। প্রকৃতির এই বিরুপ আচরনে নিয়ন্ত্রন নেই তাদের। কয়েকদিন আগেও তরতরিয়ে
বেড়ে উঠেছিল সবজির চারাগাছ। কিন্তু চলমান বৃষ্টিতে একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে ক্ষেত। ক্ষেত স্যাতস্যাতে হওয়ায় গোড়া পড়ে মরেও যাচ্ছে চারাগাছ । বাড়তি লাভের আশায় সবজি চাষে নামা কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ । আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেন, এই মহুর্তে সমুদ্রে বিরাজ করছে নিম্মচাপ। এরই প্রভাবে খুলনা সহ দেশ জুড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরো কয়েকদিন নাগাত নিম্মচাপ থাকতে পারে। নিম্মচাপ কেটে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। সরেজমিন গবেষণা বিভাগ বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান জানান, কৃষকের মাঠে গিয়ে পানি অপসারন করার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পানি নিস্কাশন করতে পারলে ৫০ ভাগ সবজি গাছ বাচানো সম্ভব। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়রায় এবার ২৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলছে একটানা বৃষ্টি। এর ফলে ধানের বীজতলা সহ নষ্ট হয়েছে সবজির ক্ষেত। এমনিতে এ সময় সবজি কম থাকে তার উপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। ফনি আম্পান, ইয়াস, অনাবৃষ্টি. অতিবৃষ্টি এ যেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী।