প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষায় সব ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা হবে।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতা ভোগ বিলাসের বিষয় নয় এটা দায়িত্ব- এ কথা সরকারি কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভালো কাজের স্বীকৃতি মিলবে, কিন্তু অপরাধ করলে ক্ষমা নেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীন দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ যাদের টিকা পাওয়ার বয়স হয়েছে, তারা বাদ যাবে না। ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলের জন্য এ টিকা আমরা আনতে থাকব এবং দিতে থাকব। এ ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা হাত থেকেও আমরা ইনশাল্লাহ মুক্তি পাব। ভ্যাকসিন কেনা আমরা শুরু করেছি, দেয়াও শুরু হয়েছে। ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে হবে যাতে অন্তত সকলেই সুরক্ষিত থাকে।
‘ইতোমধ্যে আমি নির্দেশও দিয়েছি পরিবারের যারা বা বাসায় যারা কাজ করে তাদেরও যেন ভ্যাকসিনটা দিয়ে দেয়া হয়। তাহলে সবাই সুরক্ষিত থাকতে পারবে। প্রয়োজনে যত টাকা লাগে আমরা… যত ভ্যাকসিন লাগে আমরা কিনব। আর ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরি করব যাতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহামারি আজকে শুধু অর্থনীতি না সামাজিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করেছে। এখান থেকে যতদ্রুত মুক্তি পাওয়া যায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে তাদের সচেতন করতে হবে।’
‘২৭ তারিখ আমাদের জন্য বিশেষ দিন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনটিও আমার বিশেষ দিন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, পাকিস্তান দিবস। সেদিন বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেনি। (ধানমন্ডি) ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। তখন আমি কেবল সন্তানসম্ভবা। আমি সাধারণত বাবার হাত-পায়ের নখ কেটে দিতাম, সেটা আমার নিয়মিত কাজ ছিল। সেদিন একমগ পানি নিয়ে বাবার নখ কাটতে বসলাম। সেদিন বাবা বললেন, হ্যাঁ, ভালোভাবে কেটে দে, কারণ পরে আর সুযোগ পাবি কি-না! তবে তোর ছেলে হবে, সে ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে হবে, তার নাম “জয়” রাখবি।’
২৫ মার্চের ভয়াল রাতের ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বন্দি অবস্থায় মেডিকেলে জয়ের জন্ম হয়। পরে বাচ্চা নিয়ে কারাগারে আসলে একজন পাকিস্তান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করে তার নাম কী? আমি বলি, জয়। বলে মানে কী? বলি, জয় মানে জয়, ভিক্টরি। তখন এই ছোট্ট শিশুকেও তারা গালি দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আজ তার (জয়ের) জন্মদিন। ৫০ বছর বয়স হলো জয়ের। এই করোনার কারণে আমরা একসাথে হতে পারলাম না, এটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজকে যেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। এটা জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা। কারণ, ৮১ সালে এসে যখন বার বার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। তখন বার বার আমাকে গ্রেফতার-গৃহবন্দি করা হয়েছে। তখন বাবার বন্ধু আজিজ সাত্তার কাকা জয় ও পুতুলকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুল থেকেই জয় কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। যখন ছুটিতে আসতো, কম্পিউটার নিয়ে আসতো। জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার শিখেছি। ৯১ সালে যখন পার্টির জন্য অনেক দামে কম্পিউটার কিনি, তখনই আমরা আলোচনা করি, কীভাবে দেশে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, জয় আমাকে পরামর্শ দিলো কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলতে হবে, দাম সস্তা করতে হবে। মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে হবে, মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলেই মানুষ এটা শিখবে। সেভাবেই কিন্তু আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আবার যখন সরকারে আসি, দেখি কেউই এটা ব্যবহার করতো না। আমিই নির্দেশ দেই, সব ফাইল যেন কম্পিউটার কম্পোজ হয়ে আমার কাছে আসে। এখন কিন্তু সে সুফল আমরা ভোগ করছি।’
প্রশাসন নিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সরকার মানে জনগণের সেবক। সরকারি কর্মকর্তাদের যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া যায়, কর্মপরিকল্পনা দেয়া যায়, তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারে সেটাই আজকে প্রমাণিত। তাদের মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়া যায়, তাহলেই সব কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব। যাদের মাধ্যমে আমরা কাজ করবো, তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটিও আমরা করেছি।’
এ সময় মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতেও সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২০ ও ২১ দুই বছরের জনপ্রশাসন পদক এক সাথে প্রদান করা হয় ৩৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলন হক ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।