চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসমন্বিত উদ্যোগের অভাবে খুলনার উন্নয়ন সময়ের সাথে এগোয়নি। খুলনার উন্নয়নে কেডিএ, কেসিসিসহ অন্যান্য দপ্তরের আরও সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কারণ কেডিএ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে সেবাদান সম্ভব নয়। তাই জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়েই জলাবদ্ধতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও কেডিএ আবাসনের সুদের ন্যায় সমস্যার সম্মানজনক সমাধান করা হবে। মানুষের সকল ক্ষোভের বিষয় দূর হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) আয়োজিত বিশ্ব বসতি দিবসের আলোচনা সভায় এ সকল কথা বলেন।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অবিরাম ও অক্লান্ত কাজ করে চলেছেন। উন্নয়ন অবকাঠামোর বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ রোল মডেল। কিন্তু কিছু ঘটনার কারণে আমরা হোঁচট খাচ্ছি। বৃহৎ প্রকল্পে দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পায়নি। বাংলাদেশের উন্নয়ন উঁইপোকায় খেতে পারবে না। শেখ হাসিনার আমলে অপরাধ করে কেউ ছাড় পায় না। কর্তব্য ও দায়িত্ব নিয়ে অভিন্ন লক্ষে কাজ করে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও ইভটিজিং হতে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে শেখ হাসিনা জিরো টরালেন্স। দুর্নীতি বা অন্যায় করে কেউ দায়মুক্তি পাইনি। যুবলীগ-ছাত্রলীগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি, যুদ্ধাপরাধী সবার বিচার হয়েছে। অনেকে দুর্নীতি করে হঠাৎ বড়লোক হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে চলে গিয়ে আয়েশী জীবন-যাপন করছে। এ ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা করা যাবে না। কাজ না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফাঁকি দেয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের দায়সারা কাজ শেখ হাসিনার আমলে হতে পারে না। জনগণের সেবক হয়ে মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ কেউ আর শুনতে চায় না।
তিনি বলেন, সড়কে ৬০ ফুট জায়গা রাখতে হবে। কেউ সড়কের জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়লে তা ভেঙে ফেলা হবে। প্লান ও ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দিতে মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। কারণ সেবা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।
তিনি বলেন, ভাল নগরী গড়তে পরিকল্পনার বিকল্প নেই। খুলনাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। রজন্য বেশি বেশি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। দেখা যাচ্ছে অনেক সময় ফান্ডের টাকা যথার্থভাবে খরচ হচ্ছে না।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, কেডিএ সৃষ্টির পর থেকে দৃশ্যমান তেমন কোন উন্নয়ন করেনি। সেবামূলক কাজ না করে তারা আবাসন এলাকা গড়ে তুলে ব্যবসা করেছে। প্লট বিক্রয়ে তারা চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ গ্রহণ করেছে। এছাড়া আবাসন গড়ে তুলতে তারা খাল, বিল ও জলাভূমি ভরাট করেছে। কিন্তু কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলেনি। কোন আবাসিক এলাকায় বর্জ্য রাখার জন্য সেকেন্ডারী স্টেশনও রাখা হয়নি। কিছু সড়ক নির্মাণ করলেও সেগুলোর মান খুবই খারাপ। নিম্নমানের কাজের কারণে তা অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। মাস্টার প্লান বাস্তবায়নের তাদের ভাল উদ্যোগ নেই। মাঠ পর্যায়ে মাস্টার প্লান বাস্তবায়নে জনগণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। ফলে অপরিকল্পিত বাড়ি ঘর নির্মিত হচ্ছে। ফলে মানুষ মারা গেলে গাড়িতে করে লাশ বের কারা যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরা নগরীর উন্নয়নে আরও যৌক্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি করে কেডিএ এর নির্মাণাধীন আবাসিক প্রকল্পসমূহের ড্রেনেজ ও আবর্জনা অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা রাখার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি কেডিএকে আরও জনঘনিষ্ঠ করার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল মুকিম সরকার। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোস্তফা সারোয়ার।