চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃআবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার যশোরের কৃষকরা বোরো ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন। বাজারে ধানের দামও অন্যবারের তুলনায় বেশি। আড়তদাররা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে চাহিদা থাকায় শেষ পর্যন্ত দামের হেরফের খুব একটা হবে না। বাজারেই ভালো দাম পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী কৃষকরা।
জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এবার ৩৫ বিঘে জমিতে ধান করেছিলাম। ধান পেয়েছি ৭০০ মণ। আড়তে ধান বিক্রি করেছি এক হাজার ৭০ টাকা দরে।’
খাজুরা এলাকার কৃষক হাশেম আলী বলেন, ‘এবার ২০০ মণ ধান পেয়েছি। গতবছর মণ প্রতি দাম পেয়েছিলাম ৭০০-৮০০ টাকা। এবার এক হাজার টাকা বা এর বেশি দাম পাচ্ছি। এমন চললে কৃষক বাঁচবে। গতবার বেশ ক্ষতির শিকার হতে হয়েছিল।’
ধানের স্যাম্পল দেখা হচ্ছেজেলা সদরের হাশিমপুর এলাকার কৃষক আতাউর রহমান ১২ বিঘা জমিতে এবার ধান চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘বাসমতি ধান বিক্রি করেছি মণ প্রতি ১১৫০ টাকা। গত তিন-চার বছর ধানের দাম খুব কম পায়েছি।’ দাম বেশি পেয়ে এবার খুব খুশি এই কৃষক।
আড়তদার আনিসুজ্জামান জানান, মৌসুমের শুরু থেকে সর্বনিম্ন ৯৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি শুরু করেন কৃষকরা। বুধবার (১০ জুন) প্রতি মণ আটাশ ধান ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা, সুবল লতা ১০২০ টাকা, জিরে মিনিকেট ৯৮০ থেকে ১০৮০ টাকা এবং বাসমতি ধান ১১০০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা সরকারি গুদামে ধান দিতে চাচ্ছেন না এবার। তাদের অভিযোগ, শুকনো ধান নিয়ে গেলেও সরকারি গুদামের কর্মকর্তারা বলেন তাতে ময়েশ্চার আছে। ধান ঝেড়ে (বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করা) নেওয়ার পরও বলেন—চিটা আছে। তাছাড়া ওজনও হয় ৪৩-৪৪ কেজিতে মণ। আর সরকার নির্ধারিত ১০৪০ টাকার চেয়ে এবার আড়তেই তারা বেশি দাম পাচ্ছেন। এ কারণে এবার সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে চান না তারা।
বাজারে নেওয়া হচ্ছে ধানখাজুরা বাজারের আড়তদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বছর ধানের বেশ চাহিদা রয়েছে। মিলমালিকদের চাহিদাও প্রচুর। শুরুতেই ধান ১০০০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন কৃষকরা। এখন তো আরও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি জানান, শ্রাবণ-ভাদ্র মাস পর্যন্ত ধানের চাহিদা থাকবে। এ কারণে এবার দামের খুব বেশি একটা হেরফের হবে বলে মনে হয় না।
এদিকে জেলা খাদ্য বিভাগ বলছে, জেলায় এ বছর বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী আমরা কৃষকদের ফোন দিচ্ছি ধান কেনার জন্যে। কিন্তু বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় তারা খাদ্যগুদামে ধান দিতে চাচ্ছেন না।’
বাজারে নেওয়া হচ্ছে ধানতিনি এও বলেন, কৃষকদের ধানে ময়েশ্চার ১৯-২০ শতাংশ। আমাদের কাছে ধান বিক্রি করতে হলে ধান ঝেড়ে-বেছে দিতে হয়। তাতে তারা যে ধান নিয়ে আসে তা কমে যায়। এ করণেই হয় তো তাদের আগ্রহ নেই।’
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোর জেলায় এ বছর এক লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এই জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।