কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি :: নীল আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। সকালের সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। এ যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য। দেখে মনে হয় হলুদ বরনে সেজেছে প্রকৃতি। মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ মাছিরা। পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে থাকে। ফুলগুলোর তাদের কলি ভেদ করে সুভাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপর সৌন্দর্যের লীলা ভূমি। শুধু হলুদ আর হলুদের আভায় যেন কয়রার মাঠ সেজেছে আপন মহিমায়। সবুজ প্রকৃতি যেন হলুদের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সরিষার ফুলের মৌ মৌ গন্ধে এখন মৌমাছির গুঞ্জন সরব হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। সরোজমিনে উপজেলার উলা, ৩ নং কয়রা সরিষা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সরিষা মাঠ জুড়ে ভিড় করেছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরষ, শিশুসহ বিনোদন প্রেমিরাও এমন সব ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ছুঠেছেন ফসলি মাঠে। সরিষা মাঠ ঘুরে দেখছেন। কেউবা আবার মোবাইল ফোনে সেলফি তুলছেন। এমন চিত্র দেখা গেছে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ গুলো। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। বাগালী ইউনিয়নের কৃষক আলাউদ্দীন বাবু বলেন, কম পুঁজিতে সরিষার চাষে দ্বিগুন লাভ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৪/ ৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭ থেকে ৮ মন সরিষা উৎপাদন করা যায়। আবার সরিষা ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই মুগ ডাল চাষ করেন তিনি। সরিষা আবাদের কারনে ওই জমিতে বাড়তি হাল চাষ, সার, কীটনাশক ঔষধও দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই তার মতো অনেকেই সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। আরেক কৃষক মজিবর রহমান বলেন, দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে বারি সরিষা ১৮ জাতের সরিষার ফলন ভালো হয়। স্বল্প খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম। তাই প্রতি বছরই এ সময়ে সরিষার আবাদ করি। উচু জমি সরিষা চাষের জন্য উপযুক্ত। প্রথমে হালকা ভাবে চাষ করে সরিষার বীজ বপন করতে হয় পরে দু’ একবার কিছু ঔষধ ও কীটনাশক দিলেই সহজে ফলন ভাল হয়। বীজ বপনের ৮০/৮৫ দিনের মধ্যেই সরিষার ফলনও ঘরে তুলতে পারি। ধান তোলার পর এই সময়ে জমিতে সরিষার চেয়ে ভাল ফসল হতেই পারে না। ৪নং কয়রা গ্রামের কৃষক আহমেদ আলী ও গোপাল জানান, কয়েক বছর আগেও তাদের জমি পরিত্যাক্ত থাকত , কিন্তু বর্তমানে সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের পরামর্শে তারা এখন জমিতে সরিষা চাষ করছেন। গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভাল হবে আশা করছি। আমি ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি আবহাওয়া ভাল থাকলে ফসল ঘরে তুলতে পারব। এ কারনে কৃষকরা রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীরা। এদিকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চোখে পড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন প্রিয় মানুষ। প্রকৃতিপ্রেমি বিপাশা বিশ^াস জানান, এমন সৌন্দর্য কাছ থেকে না দেখলে কেউ বিশ^াস করতে পারবেন না। আসলেই যে সুঘ্রাণটি অনুভব করি, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান জানান, এ বছর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ থেকে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন কৃষককে বারি সরিষা ১৪, ১৭ ও ১৮, সরিষার বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা আবাদে তেমন পোকার আক্রমন না থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সরিষা ফুলের চাষ কৃষকদের জন্য অতান্ত গুরুত্বপূর্ণ্ এ সময় কৃষকেরা বেরো চাষ ব্যহত না করে, স্বল্প সময়ে একটি বাড়তি ফসল উৎপাদন করতে পারে। কৃষকরাও লাভবান হয়, পাশাপাশি জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনর রশিদ জানান, এ বছর কৃষককে সরিষা চাষে ব্যাপক সচেতন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে কৃষকদের কে বারি সরিষা ১৮ বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। যাহা হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারি, যেখানে অন্যান্য সরিষার জাতে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ৪০% থেকে ৪৫% সেখানে বারি সরিষা ১৮ জাতে তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ১.০৬% ফলনও বেশি ২ থেকে ২.৫০ টন হেক্টরে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সভা ও উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমন হলে কি করনীয় সে বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করেছেন।তাছাড়া কৃষি বিজ্ঞানীরা সব সময় মাঠে থেকে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন।