চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃর্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ডুমুরিয়ার মূতির্তমান আতঙ্ক বিকাশ দে’র অপকর্মের আমলনামা গতকাল শনিবার দৈনিক সময়ের খবরে প্রকাশের পর গোটা এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সংবাদটি গতকাল কৈয়া বাজার এলাকায় ছিল হট কেক। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র বিকাশের অপকর্মের অজানা তথ্য জানার জন্য উন্মুখ ছিল জনগণ। চাহিদামত পত্রিকা না পেয়ে অনেকে ফটোকপি করে পত্রিকা সংগ্রহ করেছে। এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় বিকাশ সাম্্রাজ্যের পতন হলেও তার পালিয়ে থাকা সহযোগীরা অনেককে নানা হুমকি দিচ্ছে, পাশাপাশি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৈয়া বাজার এলাকায় নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। গতকাল কৈয়া বাজার এলাকায় সরেজমিন ঘুরে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পাশাপাশি মিলেছে তার অপকর্মের আরও অজানা তথ্য।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে কৈয়া বাজার এলাকার ত্রাস একাধিক মামলার আসামি চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী বিকাশ দে নিহত হয়। গতকাল শুক্রবার দৈনিক সময়ের খবরে তার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি পড়তে এলাকাবাসীর আগ্রহ ছিল ব্যাপক। স্থানীয় পত্রিকা সবরাহকারী লিটন বলেন, নিয়মিত দুই শতাধিক সময়ের খবর চলে ছোট্ট এ কৈয়া বাজারে। গতকাল অতিরিক্ত আরও কাগজ এনেও হয়নি। পরে ফটোকপি করে বিক্রি করা হয়েছে। পাঠক অভয়চরণ বলেন, বিকাশের আমলনানা পত্রিকায় না আসলে এলাকাবাসী অন্ধকারে থাকতো।
এদিকে বিকাশের জমিদখলকারী ও মাদক ব্যবসা পরিচালনাকারী কমপক্ষে ২০ ক্যাডার গত ৩ দিন ধরে এলাকা থেকে লাপাত্তা হয়েছে। এদের মধ্যে ২-৩ জন অজ্ঞাত স্থান থেকে অনেককে নানা হুমকি দিচ্ছে। সংবাদকর্মী ও প্রশাসনের কাছে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিন ঘুরে বিকাশের অপকর্মের আরও অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সূত্র জানায়, বাজারের খোকন মন্ডলের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বিকাশ বাহিনী। এর মধ্যে ২৮ হাজার টাকা দেয়ার পরও খোকনকে তার স্ত্রী সন্তানের সামনে মারপিট করে বিকাশ বাহিনী। এ অপমান সইতে না পেরে খোকনের স্ত্রী লতিকা মন্ডল গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে। বর্তমানে খোকন পাগলের মত ঘুরে বেড়ায়। খুলনা ওয়াসায় কর্মরত রেজাউল বিকাশের সহায়তায় কোমলপুর গ্রামের আফজাল সরদারের কৈয়া বাজারের দোকান ও বসতঘর ভাঙচুর করে আফজালকে উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেয়। কৈয়া বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী অমল বিশ্বাসের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিকাশ। না দেয়ায় তাকে মারপিট করে। দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দেয়ায় বালুর মাঠে শোলমারীর জয়ান্তের চোখ তুলে নিতে যায় বিকাশ ও তার বাহিনী। ঠিকাদার মিজানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না পাওয়ায় তাকে মারপিট করা হয়।
সূত্রমতে, বিকাশ মাদক ও জমি দখলের পাশাপাশি একটি বড় জুয়ার বোর্ড চালাতো। মিজান ওরফে ক্লাব মিজান ওই বোর্ড হাতো শহিদের বাড়িতে পরিচালনা করতো। গত মাসে মিজান গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হলে বিকাশ তদবির করে ছাড়িয়ে আনে। তার অর্থের একটি বড় অংশের যোগানদাতা ছিল এই ক্লাব মিজান। জগদীশ নামে এক হাড়ি পাতিল ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাড়া থাকতো বিকাশ। গত আড়াই বছর ওই বাড়ির কোন ভাড়া দেয়নি সে বলে ওই মালিক জানিয়েছে।
বিকাশের নামে বিভিন্ন থানায় রেকর্ডকৃত ১৬টি মামলার মধ্যে বটিয়াঘাটা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নম্বর ১৬(৭)১০, একই ধারায় একই থানায় মামলা নম্বর ১০(৫) ১০, ডুমুরিয়া থানায় মামলা নম্বর ৩২(৭)১৩, হরিণটনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নম্বর ১(৫)১৪, লচণচরা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা নম্বর ২(৫)১৬, বটিয়াঘাটা থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা নম্বর ৭(৩)১৬, হরিণটানা থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা নম্বর ৭(৫)১৬, একই থানায় মামলা নম্বর ৩(৪)১৬, অস্ত্র আইনে মামলা নম্বর ২ (৮)১৬,নন জি আর ১২৪২/১৬, হরিণটানা থানায় মামলা নম্বর ৬(৬)১৮, হরিণটানা থানায় মাদবদ্রব্য আইনে মামলা নম্বর ৬(৬) ১৮সহ ২০টি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে কমপক্ষে অর্ধশত অভিযোগ রয়েছে। বিকাশ বন্দুক যুদ্ধে নিহত হলেও তার সহযোগীরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকাবাসী অজানা আতঙ্কে আছে।