অনলাইন ডেস্কঃসাংবাদিক আব্দুল জলিলকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইউসুফ আলীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এ কমিটি গঠনের আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে সুবিচার দাবিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার খুলনায় কর্মরত ৬৩ জন সাংবাদিক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের নিকট দেয়া হয়। এ সময় স্মারকলিপি গ্রহণকালে সাংবাদিকরা সুবিচার পাবেন বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে খুলনায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, গত ৭ জুলাই সকালে নগরীর ৮৩, মুসলমানপাড়ার বাসিন্দা ও খুলনা প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদক (ক্রীড়া) এবং দৈনিক খুলনাঞ্চল পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল জলিলের বাসভবনে আকস্মিক অভিযান চালায় খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভীন আক্তারের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন, সিপাহী মোঃ জিল্লুর রহমান, মোঃ রুবেল হোসেন, মোঃ বোরহানুর রহমান মৃধা অভিযানে অংশ নেন। তাদের মধ্যে দু’জন এম এ জলিলের বাড়ির দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এর কিছুক্ষণ পর এম এ জলিলের বাড়ির পাশের ড্রেন থেকে প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগে থাকা ১০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে। পরে সাংবাদিক জলিলকে আসামি করে মামলা দেয় সংস্থাটি।
মামলায় বলা হয়েছে, ‘সংস্থার লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করলে ঘরের জানালা দিয়ে ফেন্সিডিলের ব্যাগটি ড্রেনে ফেলে দেয়া হয়।’ কিন্তু সরেজমিনে গেলে দেখা যাবে ওই জানালা দিয়ে ব্যাগ ফেলানো শুধু অবাস্তবই নয়, অলৌকিক ঘটনা। পরে বিকেলে খুলনা সদর থানার মাধ্যমে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আব্দুল জলিল শুধু একজন সাংবাদিকই নন, তিনি একজন কৃতি ফুটবলার এবং দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। ব্যক্তি জীবনে মাদকতো দূরে থাক, তিনি ধূমপানও করেন না। এছাড়া তিনি মুসলমানপাড়া স্থানীয় হাক্কানী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সাংবাদিক আব্দুল জলিলকে পরিকল্পিতভাবে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। কিছুদিন আগে মাদক অধিদপ্তরের সোর্স টুটুলের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত রিপোর্ট হওয়ার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। সোর্স টুটুলের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলাও আছে। গ্রেফতারের ৯ দিন আগে আব্দুল জলিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান-এর কাছে এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধের প্রতিকার চেয়েছিলেন। এখন তাকেই পরিকল্পিতভাবে মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনার পর খুলনার সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীকরা দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। খুলনার কর্মরত সাংবাদিকরাও নিরলসভাবে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এর ফলে মাদক ব্যবসায়ীসহ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। আব্দুল জলিলের ক্ষেত্রেও তেমনি ঘটেছে। এ সকল ব্যক্তি বা কর্মকর্তারা প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ ও মাদক বিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে সাংবাদিকরা দাবি করেছেন।