সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃসাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী এবং হিসাব রক্ষক প্রদীপ কুমার মন্ডল। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বড় বাবু নামেই তিনি বেশি পরিচিত। নিয়োগ বাণিজ্য, বদলী বাণিজ্য, ডেপুটেশন বাণিজ্য, পি আর এল ও পেনশন বাণিজ্যসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল অবৈধ কাজের মূল হোতা এই বড় বাবু। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন তার অবৈধ সকল প্রকার কাজ। উচ্চমান সহকারী হয়েও সাতক্ষীরা শহরে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করছেন বিলাসবহুল বাড়ি।নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে রয়েছে নগদ কোটি কোটি টাকা ও ভু-সম্পত্তি ।দুদক অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে যাবে বড়বাবু প্রদীপ কুমারের অবৈধ জ্ঞাত আয় বহিভুত সম্পদের তথ্য ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রদীপ কুমার মন্ডল ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হিসেবে বদলী হয়ে আসেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের পর থেকেই তিনি ঘুষের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল প্রকার নিয়োগ, বদলী, ডেপুটেশন, পি আর এল ও পেনশনসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কাজ শুরু করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, তার বিরুদ্ধে চাকুরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ এবং টাকার বিনিময়ে নৈশ প্রহরী নিয়োগ, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দেওয়াসহ আরো বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে জেলা শিক্ষা অফিসের একটি তদন্তদল। তাদের তদন্তে প্রদীপের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত কমিটি তাকে অন্যত্র বদলী করার জন্য সুপারিশ করে।
সুপারিশের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তাকে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বদলি করা হয়। বদলির প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও প্রদীপ কর্মস্থলে যোগদান না করায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নিদের্শ দেন। একই সাথে এই নির্দেশের অনুলিপি দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে। তবে, প্রদীপ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিনের সাথে আঁতাত করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি প্রদীপ গত কয়েক বছরে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা শহরের পৌরসভায় ২নং ওয়ার্ডের রথখোলা বিলের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করেছে বিলাসবহুল ৪ তলা বাড়ি। যদিও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা যায় তার বেতন সর্বসাকুল্যে ২৯ হাজার ৯১৬ টাকা। বিলাসবহুল এই বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্যস্ত থাকায় তিনি অফিসে যেতে পারেন না।
শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে জানা যায় যোগদানের পর থেকে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও সব মিলিয়ে মাত্র কয়েক দিন অফিস করেছেন প্রদীপ। শ্যামনগর অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মির্জা মিজানুর রহমান বলেন, “মাঝে মাঝে আসেন, মাঝে মাঝে আসেন না। এ বিষয়ে তাকে বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে অফিস করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার বলেন, “অফিসের কিছু কাজে সব সময় জেলা অফিসে থাকতে হয়। তাই উপজেলা অফিসে গিয়ে আমাকে নাও পাওয়া যেতে পারে। উচ্চমান সহকারী হয়ে কিভাবে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি বানাচ্ছেন এমন এক প্রশ্নের তিনি জানান,আমার ব্যাক্তিগত টাকা দিয়ে এ বাড়ি নির্মান করছি ।আমি যদি অনিয়ম ও দুর্ণীতি করি সেটা দেখার জন্য জেলা অফিস আছে,ডিডি অফিস আছে তারা দেখবে ।
আর আমার বিষয়ে পত্রিকায় লিখে কিছুই করতে পারবেন না কারন আমি যা করি সেটা জেলা ও ডিডি অফিস অবগত আছেন ।
এদিকে, প্রদীপ কুমার মন্ডলের অনুপস্থিতির বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।