সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃজাল জালিয়াতির মাধ্যমে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের কোটি টাকার জমি জবরদখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে দখলমুক্ত করতে পারছেন না লক্ষীদাাঁড়ি গ্রামের রবিন সরদার ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সাতক্ষীরা সদরের লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের বলাই সরদারের ছেলে রবিন সরদার জানান, স্বাধীনতার পূর্বে ভোমরা বন্দরে তার পৈতৃক ৮১ শতক সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই জমি পানি উন্নয়স বোর্ড ব্যবহার না করায় তারা দখল করতেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ডি রিকুইজিশনের মাধ্যমে(এলএ কেস ৫/৬২-৬৩) ৮১ শতক জমির পুকুর পাড়ের ১৪ শতক জমি ১৯৯৫ সালের ২২ মার্চ দখল বুঝাইয়া দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে বাকী জমি(পুকুর) তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার দখলে থাকে। সে অনুযায়ি তিনি পুকুর পাড়ে কয়েকটি পাকা ঘর বানিয়ে স্থানীয় সিএণ্ডএফ এজেন্টকে ভাড়া দেন। ওই জমি বর্তমান জরিপের ২২৯৪ দাগ ও এসএ ৪৬৪ খতিয়ানে ১০৯৯ ও ১১০০ দাগের অর্ন্তভুক্ত।
তিনি আরো জানান, তার রেকডীয় জমিসহ তার শরীকদের বেশ কিছু জমি একটি বিনিময় দলিলমূলে দাবি করে আসছিল এক সময়কার ভারতের ঘোজাডাঙার বাসিন্দা খালেক গাজী। ওই বিনিময় দলিল খালেক গাজী তার জীবদ্দশায় আইনি প্রক্রিয়ায় ভ্যালিড করতে পারেননি। তিনি মারা যাওয়ার পর খালেক গাজীর ছেলে ইদ্রিস অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে তার মা ছকিনা খাতুনের নামে একটি অনিবন্ধিত আমমোক্তার নামা তৈরি করে। এসব জমি নিয়ে সদর সহকারি জজ আদালতে মামলা করলেও খারিজ হয়ে যায়। এরপরও ২০১৮ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ‘ক’ তপশীলে উলেখ থাকা জমি নিয়ম বহির্ভুতভাবে অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনালে মামলা না করে সাব জজ প্রখম আদালতে মামলা করেন ছকিনা। রাষ্ট্রপক্ষ ওই মামলার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেল বর্তমানে তা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তহশীল অফিসে চাকুরি করার সুবাদে ওই জমির দাগ ও খতিয়ান তহশীল অফিস, সহকারি ভূমি কমিশনারের রেজিষ্টিার থেকে উধাও করে দিয়েছে খালেকের মেয়ে রোকেয়া। যদিও ম্যাপ থেকে তা উধাও করতে পারেনি। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে তার ছেলে মিঠুন সরদার।
রবিন সরদার আরো জানান, খালেক গাজীর মেয়ে রোকেয়া স্থানীয় ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পিওন হিসেবে কাজ করার সুবাদে ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বাবা খালেক গাজীর নামে খাজনা কাটলে সিরাজ সুবেদারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পেয়ে দুদকের মামলায় জেলে যেয়ে মারা যান ওই তহশীলদার আবু বক্কর ছিদ্দিক। এ মামলায় আসামী ছিলেন খালেক গাজী। তিনিও মারা যাওয়ায় এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে খালেক গাজীর ছেলে পুকুরসহ তার ৮১ শতক জমি জবরদখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। স¤প্রতি তার পুকুরপাড়ে নির্মিত ভাড়া দেওয়া ব্যবসায়িদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভাড়ার টাকা আদায় করে চলেছে। প্রতিবাদ করায় তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, বিনিময় দলিল মুলে বাবা ও আমমোক্তারনামা মুলে মা ছকিনা ওই জমির মালিক। এ নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। মালিক হিসেবে তিনি ওই জমি দখল করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস সাতক্ষীরা শাখার নামে ইজারাকৃত কোটি টাকার নয় শতক জমি জবরদখল করে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করা সম্পর্কিত প্রতিবেদন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে র্যাব ও স্থানীয় প্রশাসন গত ৭ মে ইদ্রিস আলীকে আটক করে। একপর্যায়ে তিন দিনের মধ্যে ওই নির্মাণাধীন ঘর ভেঙে নেওয়ার জন্য মুচলেকা দিলে তিনি লুকোচুরি খেলছেন।