গত ১০ বছরে সাতক্ষীরা জেলার ছয়টি খেয়াঘাট ইজারার ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আশাশুনির শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল ও জেলা পরিষদের দু’কর্মকর্তাসহ ১২ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক নাজমুল হাসান বাদি হয়ে খুলনা দুদক কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুড়োখারাটি গ্রামের মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল, শ্রীউলা ইউনিয়নের কলিমাখালি গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের এড. নুরুল আমিন, গাজীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মোঃ সরোয়ার হোসেন, একই উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের দলিল গাজীর ছেলে হারুণ অর রশিদ, গোদাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী গাজীর ছেলে আইয়ুব হোসেন, কালিগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের সাদুল্লাহ কারিকরের ছেলে আব্দুল মজিদ কারিকর, কোমরপুর গ্রামের ওসমান গাজীর ছেলে মোঃ মোক্তার হোসেন, শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের আব্দুল বারির ছেলে মোঃ শাহীন হোসেন, শহরের মুনজিতপুর এলাকার আরশাদ আলীর ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন, শহরের সুলতানপুর এলাকার শেখ সাইফুদ্দিন আহমেদ এর ছেলে শেখ আহছান হাবিব অয়ন, সাতক্ষীরা সদরের মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের আরিফ সরদারের ছেলে ও জেলা পরিষদের প্রধান সহকারি মোঃ খলিলুর রহমান ও শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামের আতিয়ার রহমান সরদারের ছেলে ও জেলা পরিষদের নিম্নমান সহকারি এসএম নাজমুল হোসেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাংলা ১৪১৫ সাল থেকে ১৪২৪ সাল বা ইংরেজি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরার চেউটিয়া, কালিগঞ্জ বাজার, ঝাঁপালি-মাদারবাড়িয়া, কালিকাপুর নাসিমাবাদ, ঘোলা- হিজলা- কল্যাণপুর এবং হাজরাখালি -বিছট খেয়াঘাটসহ ২১টি খেয়াঘাটে এক কোটি ৯৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫৮ টাকার ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইজারাদাররা এক কোটি ৮১ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৮ টাকা জেলা পরিষদের কোষাগারে জমা দেন। বকেয়া থাকে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮২০ টাকা। বাংলা ১৪২২ সালে কালিগঞ্জ বাজার খেয়াঘাটের ইজারাদার মোক্তার হোসেন ৩৭ হাজার ৯০০ টাকা, ১৪১৯ সালে ঝাঁপালি- মাদারবাড়িয়া খেয়াঘাটে ইজারাদার আইয়ুব হোসেন ৩৯ হাজার ৬৯২ টাকা, একই খেয়াঘাট ১৪২১ সালে ইজারাদার ইকবাল হোসেন ২৫ হাজার, ১৪২২ সালে ইজারাদার হারুন অর রশিদ ৫ হাজার ৪০০ টাকা ও ১৪২৩ সালে ইজারাদার মোঃ শাহীন ৩৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেননি।
এ ছাড়া ১৪২২ সালে কালিকাপুর-নাসিমাবাদ খেয়াঘাটের ইজারাদার আব্দুল মজিদ কারিকর ২৭ হাজার ১০০ টাকা, ১৪১৯ সালে হাজরাখালি-বিছট খেয়াঘাটের ইজারাদার শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল ৫ লাখ ৬০ হাজার ৫২৮ টাকা, চেউটিয়া খেয়াঘাটে ১৪২৩ সালে ইজারাদার সরোয়ার হোসেন ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা, ১৪২৪ সালে শেখ এহসান হাবিব অয়ন ৬৭ হাজার, ঘোলা-হিজলা-কল্যাণপুর খেয়াঘাটে ১৪১৫ সালে ইজারাদার এড. নুরুল আমিন ২৫ হাজার ১০০ টাকা, একই খেয়াঘাট ১৪১৯ সালে ইজারাদার শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬০০ টাকা জেলা পরিষদের কোষাগারে জমা করেননি। এ ক্ষেত্রে শুধু আবু হেনা শাকিলই ১০ লাখ ৬০ হাজার ১২৮ টাকা ইজারার টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। টাকা পরিশোধের জন্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ওইসব ইজারাদারদের নোটিশ করলেও তারা সাড়া পাননি।
পরবর্তীতে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত বছরের ১৩ আগষ্ট ১০জন ইজারার টাকা আত্মসাৎকারি ও ইজারার টাকা আদায়ের দায়িত্বে থেকেও গাফিলতি করা জেলা পরিষদের প্রধান সহকারি মোঃ খলিলুর রহমান ও নিম্নমান সহকারি এসএম নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার সুপারিশ করে দু’দকের খুলনা বিভাগীয় সমন্বিত কার্যালয় ও ঢাকার সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপরোক্ত দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য খুলনা বিভাগীয় সমন্বিত কার্যালয়ে নির্দেশ পাঠানো হয়। সে অনুযায়ি খুলনা অফিস ২১ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অনুমোদন দিলে ২৭ জানুয়ারি দুদকের খুলনা অফিসের উপপরিচালক নাজমুল হাসান বাদি হয়ে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাদের কার্যালয়ে এ মামলা (২) দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সহকারি পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষকে।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার নথি পাঠানো হলে বিশেষ মামলা (০১/২১) হিসেবে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে আগামি ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন বিচারক শেখ মফিজুর রহমান। সাতক্ষীরা জজ কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে দুদক’র মামলা পরিচালনাকারি এড. আসাদুজ্জামান দিলু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।