সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শুক্রবার , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে ঘুষ বাণিজ্য; দালাল চক্রের দৌরাত্মে সেবাগ্রহীতারা অসহায় | চ্যানেল খুলনা

সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে ঘুষ বাণিজ্য; দালাল চক্রের দৌরাত্মে সেবাগ্রহীতারা অসহায়

ফারুক রহমান :: সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিস ঘুষ বাণিজ্য, আর দালালদের দৌরাত্মে সেবা গ্রহণকারীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজই এখানে হবে না এমন বদ্ধমূল ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীর অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, শ্রেণি পরিবর্তন, রুট পারমিট, সরকারি প্রতিবেদনসহ সব ক্ষেত্রেই উপরি ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। এমনই অভিযোগ এখানে আগত গ্রাহকদের।

সরজমিনে সাতক্ষীরা জেলা কালেকটরেট ভনন লাগোয়া উত্তর দিকের বিল্ডিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীর জেলা অফিস। প্রতিদিন মোটরযান সংক্রান্ত নানা সেবা গ্রহণ করতে এখানে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শত শত মানুষ এখানে আসেন প্রতিদিন। ভুক্তভোগিরা জানান, সেখানে ঘুষ টাকা দিলে ফাইলে ভুল আছে জানিয়ে ফিরিয়ে দেয় নিচের দিকের কর্মচারিরা। দালালের মাধ্যমে কাজ না করলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে ঘুষের পরিমাণ। বিআরটিএ জেলা কার্যালয়কে ঘিরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন দালালের মাধ্যমে ঘুষের টাকা ৭০% গ্রহণ করে থাকেন অফিস সহায়ক আব্দুল গফফার। আদায়কৃত ঘুষের টাকার ৩৫% নেন সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।

জেলা সদরে অবস্থিত বিভিন্ন শো-রুমের মালিক, বেশ কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মোটরযান এনডোর্সমেন্ট, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফেকেট, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযানের শ্রেণী পরিবর্তন বা সংযোজন/ধরণ পরিবর্তন/অন্তর্ভুক্তি/পিএসভি/তথ্য সংশোধন, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাজে বিআরটিএ কাজ করতে হলে দিতে হবে মোটা অংকের ঘুষ। এটি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বিআরপিএ কার্যালয়ের দালাল, কর্তৃপক্ষ আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্যে দিশেহারা জেলার মোটরযান মালিকরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষের সাথে নিয়মিতই দুর্ব্যবহার করেন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরারা।

সরেজমিনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহে দুইদিন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় প্রায় দুই’শজন প্রার্থী অংশ নেয়। মাঠে প্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময় সকলকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পরীক্ষার নিয়োম সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়। এ সময় মাইকে বলা হয় এখানে কোন প্রকার ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে না। পরীক্ষায় যা হোক সেটা আমরা দেখবো। পরে মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের সময় দেখা যায় যারা প্যাকটিক্যাল পরীক্ষার পাশ করতে পারেনি তারাও পাশ করেছে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র মোটর সাইকেল অথবা হালকা মোটরযান অর্থাৎ যে কোনো এক ধরণের মোটরযানের লার্নার (শিক্ষানবীশ) ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৩৪৫ টাকা এবং মোটরসাইকেল ও হালকা মোটরযান একসাথে অর্থাৎ মোটর সাইকেলের সাথে যে কোনো এক ধরণের মোটরযান লার্নার (শিক্ষানবীশ) ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৫১৮ টাকা ব্যাংকের মাধ্যে জমা দিতে হয়। এ টাকা জমার পর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুয়োগ দেওয়া হয়। পরীক্ষায় পাশ করার পর স্মার্ট কার্ড গ্রহণের জন্য পাঁচ বছরের নবায়ন ফিসহ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি এক হাজার ৬৮০ টাকা এবং ১০ বছরের নবায়ন ফিসহ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি দুই ৫৪২ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়।

এদিকে, ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে দিতে জেলা কার্যালয়কে ঘিরে ১৫ থেকে ২০ জন দালাল রয়েছে। যারা প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে সাড়ে ৬ হাজার করে টাকা নিয়ে অফিস সহায়ক আবদুল গফফারের মাধ্যমে অফিসে ঘুষ হিসেবে দেয় দুই হাজার টাকা। সপ্তাহে দুই দিন পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রতি পরীক্ষায় প্রায় দুই’শজন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। অংশ নেওয়া এসব পরীক্ষার্থীর প্রায় ৭০% লোকই আবদুল গফফারের দালালের মাধ্যমে অফিসে টাকা দিয়ে থাকে। আবার পরীক্ষায় পাশ করে অফিসে ফাইল জমা দিতে গেলে মাস্টার রোলের কর্মচারী শরিফকে দিতে হয় আরও দুইশ টাকা। এ টাকা না দিলে অফিসে ফাইল জমা নেওয়া হয় না। নানা ভুল ধরে ফাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করতে সাতক্ষীরার শো-রুম থেকে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (বিএসপি) করা হলে ফাইল প্রতি দিতে হয় পাঁচশত টাকা এবং বাইরের ফাইল হলে দিতে হয় এক হাজার টাকা। একই সাথে সকল প্রকার স্মার্ট কার্ডে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় এক’শ টাকা এবং কার্ড গ্রহণের সময়ে দিতে হয় আরও একশ টাকা। মোটরযানের শ্রেণী পরিবর্তন বা সংযোজন/ধরণ পরিবর্তন/অন্তর্ভুক্তি/পিএসভি/করতে হলে প্রতি ফাইলে দিতে হয় কমপক্ষে এক হাজার টাকা। টাকা না দিলে ফাইলে ভুল আছে জানিয়ে ফেরত দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগি কয়েকজন গ্রাহক জানান, গ্রাহক মোটরযানের ফিটনেস ইস্যু/নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মোটরযান পরিদর্শক সরেজমিনে মোটরযানটি দেখে এক বছরের জন্য ফিটনেস ইস্যু/নবায়ন করেন। যেসব গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় এক হাজার পাঁচশত থেকে তিন হাজার টাকা। গাড়ির রুট পারমিট নিতে হলেও দিকে হয় একই পরিমাণ টাকা। কোন সরকারি দপ্তর থেকে গাড়ির প্রতিবেদন চাইলে নানা ভাবে গাফিলতি করা হয়। এরপর টাকা নিয়ে দেওয়া হয় প্রতিবেদন।

সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে খোজ নিয়ে দেখা যায়, সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন নিয়মিত অফিসে আসেন না। তার সাথে কথা বলা বা দেখা ককরার চেষ্টা করলে অফিস থেকে বলা হয় স্যার ছুটিতে আছেন। পরবির্ততে বাসা থেকে ফাইল স্বাক্ষর করানো হয় বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা অফিসে সরকারি কর্মচারি রয়েছে চারন। এই চার হলেন, সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন, মোটরযান পরিদর্শক মোঃ নাসিরুল আরিফিন, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর সাইফুল ইসলাম ও অফিস সহায়ক মো. আব্দুল গফফার। এছাড়া মাস্টাররোলে কাজ করেন আমিনুর, মামুন, নয়ন, শামীম, শরীফ, কামরুল, নাজমুল, জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজন।

উল্লেখ্য, মামুন নিজেকে এডি’র ঘনিষ্ট আত্মীয় বলে দাবি করেন এবং সাধারণ গ্রাহকদের বলেন, শর্ট টাইমেই আপনার সমস্যার সমাধান আমি ছাড়া কেউ করতে পারবে না। এই অফিসে মাস্টাররোলে কাজ করে কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। আমিনুর রহমান করেছেন আলিশান বাড়ি। তার রয়েছে গাড়ি, রড-সিমেন্টসহ কয়েকটি ব্যবসা। এসব দালাল ও মাস্টাররোলের কর্মচারিরা সরকারি চাকরিজীবি না হয়েও তাদের ভাবে দেখে মনে হয় তারাএ এখনকার নিয়ন্ত্রণ কর্তা। এদের খপ্পরে পড়ে নি:স্ব হচ্ছে সাধারণ সেবা গ্রহীতারা।

প্রতি মাসে বিআরটিএ সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়য়ে যে ঘুষের টাকা লেনদেন হয় তার ৭০% টাকা গ্রহণ করেন অফিস সহায়ক আবদুল গফফার। ১৫ থেকে ২০ জন দালালের মাধ্যমে তিনি এ টাকা গ্রহণে করে থাকেন বলে জানা গেছে। মাসে আদায়কৃত ঘুষের টাকার ৩৫% নেন সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন, ২৫% নেন মোটরযান পরিদর্শক মো. নাসিরুল আরেফিন এবং বাকি ৪০% ভাগ নেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআরটিএ সাতক্ষীরা অফিসের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ জুলাই অভিযান পরিচালনা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় যানবাহনের কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে তিন দালাল গ্রেপ্তার হয়।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, বেশির ভাগ সময় সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়র) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন অফিসে আসেন না।

বিআরটিএ সাতক্ষীরা অফিসের অফিস সহায়ক আবদুল গফফার বলেন, আমি সাধারণত কাউন্টারে থাকি। সেখানে আপনি আসলে দেখতে পারবেন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে সে গুলো ভিত্তিহীন। এসব বিষয়ে আমার সাথে কথা না বলে স্যারদের সাথে কথা বললে ভালো হয়।

মোটরযান পরিদর্শক নাসিরুল আরেফিন ও সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়র) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেনের মোবাইলে ফোন দিলে তারা কেউই কথা বলেননি। পরে একাধিকবার অফিসে যেয়ে তাদের সাথে কথা বলার চেষষ্টা করা হলেও তাদেরকে অফিসে পাওয়া যায়নি।

https://channelkhulna.tv/

বিশেষ প্রতিবেদন আরও সংবাদ

খুলনার ছয়টি আসনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার আশায় আওয়ামীলীগে নতুন মুখ

ডুমুরিয়ার সীমান্তবর্তী সুইচ গেট মরন ফাদে পরিনত

হারিয়ে যাচ্ছে গাঁও গ্রামের মহিলাদের ঐতিহ্য জাঁতাকল

খুলনায় ঔষুধ কোম্পানির দৌরাত্ম্যে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে

প্রভাবশালীদের প্রভাবে ডুমুরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখলের মহোৎসব থামছে না

খুলনা নগরীতে থ্রি হুইলার থেকে চাঁদাবাজি বছরে প্রায় ৪কোটি টাকা

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
উপদেষ্টা সম্পাদক: এস এম নুর হাসান জনি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: শেখ মশিউর রহমান
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
ঢাকা অফিসঃ ৬৬৪/এ, খিলগাও, ঢাকা-১২১৯।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির জন্য আবেদিত।