করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শুধুমাত্র লাল জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। হলুদ ও সবুজ জোনে অফিস সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে আজ জারি করা সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর আগে হলুদ জোনকে সাধারণ ছুটির আওতায় আনা হলেও পরে সেটা তুলে নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত ১৪ দিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বিবেচনায় যেসব এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়বে, শুধুমাত্র সেসব এলাকা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে।
এখন আপনার এলাকা রেড জোনের আওতাভুক্ত কিনা সেটা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা মাইকিং কিংবা অন্য কোন উপায় প্রচার করে জানিয়ে দেবে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ওই প্রজ্ঞাপনে অফিস খোলা রাখা ও জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩০শে জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি সংক্রমণের সংখ্যার ভিত্তিতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও নরসিংদি জেলার বেশ কিছু এলাকা লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিনটি জোনে ভাগ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, মাঝারিটা হয় ইয়েলো আর যেসব এলাকায় সংক্রমণ নেই বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংক্রমণ হয়েছে সেসব এলাকা থাকছে গ্রিন জোনের মধ্যে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং এলাকাকে রেড, ইয়েলো, গ্রিন – এই তিন জোনে ভাগ করা হয়েছে
পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে মডেল ধরে খুব ছোট পরিসরে এই রেড জোন চিহ্নিত করা হবে বলে জানিয়েছেন জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মিরপুর এলাকাকে রেড জোন করা মানে পুরো মিরপুর আটকে দেয়া হবে তা নয়। মিরপুরের ছোট একটি অংশ যেখানে সংক্রমণের হার বেশি, যেমন কয়েকটি ভবন বা ছোট একটি মহল্লাকে রেড জোনের আওতায় আনা হবে।”
সবশেষ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০শে জুন পর্যন্ত লাল অঞ্চলের সব ধরণের অফিস এবং ওইসব অঞ্চলে বসবাসরত কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটিও এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।
হলুদ ও সবুজ অঞ্চলের অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকলেও সেসব অফিসে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কেউ তার নিজস্ব কর্মস্থল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবেন না।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীদের কর্মস্থলে আসতে মানা করা হয়েছে।
জন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে কীভাবে:
সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন অনুযায়ী ওই তিনটি জোনে জন চলাচল প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
যেসব অঞ্চল সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সেসব এলাকায় এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে সিটি কর্পোরেশন।
এর বাইরে জেলা প্রশাসন সার্বিক সমন্বয় করবে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার, জেলা বা উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতর সমন্বিতভাবে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের সাথে জড়িত থাকবে।
নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সাধারণ ছুটি চললেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি
জরুরি প্রয়োজনে কিংবা অনুমোদিত সময়ের মধ্যে যদি বাইরে যেতেই হয় তাহলে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এখানে জরুরি প্রয়োজনে বলতে বোঝানো হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়, ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, চিকিৎসা সেবার জন্য যাতায়াত এবং মৃতদেহের দাফন বা সৎকার কাজ।
হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাসহ শপিং মলে আগত যানবাহনসমূহকে জীবাণুমুক্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়।
এই নির্দেশ কেউ না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে:
শিল্প কারখানাগুলো যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে কারখানা চালু রাখতে পারবে।
অঞ্চলভিত্তিক ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে। এ ব্যাপার নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই সময়কালে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে, অনলাইনে ক্লাস অব্যাহত থাকবে।
অনুমোদিত অঞ্চলে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল ও বিমান চলাচল করতে পারবে। তবে এসব বাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা কার্যক্রম চালাতে কোন বাধা নেই।
প্রতিটি জোনের জন্য কোভিড নমুনা পরীক্ষা, কোভিড-ননকোভিড স্বাস্থ্যসেবা প্রটোকল, কোয়ারেন্টিন-আইসোলেশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ, মানবিক সহায়তা প্রদান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে ধর্মচর্চা, আর্থিক/শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় / বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে:
আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিষেবা।
ত্রাণ বিতরণ।
স্বাস্থ্য সেবা।
বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি।
ফায়ার সার্ভিস।
স্থল- নদী-সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম।
টেলিফোন-ইন্টারনেট ও ডাক সেবা।
জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী।
কৃষি পণ্য, শিল্প পণ্য, পরিবহনের যানবাহন।
কাঁচাবাজার।
ওষুধের দোকান।
হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এর এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মী।