দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি আজ ১ নভেম্বর। ২০১৮ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। এরপর থেকে র্যাবের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দস্যুমুক্ত দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে সোমবার (১ নভেম্বর) বাগেরহাটের রামপালে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সাবেক দস্যুদের পুনর্বাসনে সহায়তা সামগ্রী তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।
বেলা ১১টায় বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৩২৬ জন সাবেক দস্যুর হাতে পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে বসত ঘর ও দোকানের দাবি, নৌকা-ট্রলার ও গবাদি পশু দেয়া হয়। যদি অসুখ-বিসুখে গরু মারাও যায় সেজন্যও থাকছে বরাদ্দ। সহায়তার বসত ও দোকান ঘর সাবেক দস্যুদের পছন্দনীয় জায়গায় ইতোমধ্যে র্যাবের ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে রাখা নৌকা-ট্রলার, জাল ও গরু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাবেক দস্যুদের হাতে তুলে দেন। এর মধ্যে ১০২ জন ঘর, ৯০ জন দোকান ও ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, আটটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু (বাছুরসহ) পেয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সহায়তা তুলে দেয়া হয় স্বাভাবিক জীবনে ফেরা দস্যুদের মধ্যে।
সম্প্রতি পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের একটি তালিকা তৈরি করে র্যাব। আত্মসমর্পণকারীদের চাহিদা অনুযায়ী এসব সহায়তা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিচালক ড. বেনজির আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাব-৬ ও র্যাব-৮ এর অধিনায়ক, বাগেরহাটসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।
উল্লেখ্য, আশির দশক থেকে শুরু হয় সুন্দরবন উপকূলে জলদস্যু ও বনদস্যুদের তাণ্ডব। দস্যুদের কাছে এ অঞ্চলের বনজীবী ও মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে। ডাকাতি, অপহরণ ও হত্যাসহ নানা তাণ্ডব চালায় একাধিক দস্যু বাহিনী। কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলেছে।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন উপকূলের বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের এই জিম্মি দশা থেকে বেড়িয়ে আনতে র্যাবের তৎপরতায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। আজ এর তৃতীয় বর্ষপূর্তি।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন উপকূলের বনজীবি ও মৎস্যজীবীরা আশির দশকে জিম্মি হয়ে পড়ে জলদস্যু ও বনদস্যুদের তাণ্ডবে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। ২০১২ সাল থেকে লিড এজেন্সি হিসেবে র্যাবের জোড়ালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। উপর্যুপরি অভিযানে ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় জলদস্যুরা।
প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও র্যাবের ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। ফলে সম্পূর্ণরূপে জলদস্যু মুক্ত হয় সুন্দরবন।
এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই সাফল্যের ঘোষণা দেন। গত তিন বছর র্যাব এই সাফল্য ধরে রেখেছে।