চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকরোনা পরিক্ষার ভুয়া রিপোর্ট প্রস্তুতসহ প্রতারণার নানা অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া রিজেন্ট গ্রুপ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদকে খুলনায় আনা হয়েছে। সাতক্ষীরায় দায়ের হওয়া অস্ত্র মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে তাকে র্যাব-৬ এর কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাহেদকে বহনকারী গাড়ি খুলনার র্যাব-৬ কার্যালয়ে প্রবেশ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরায় তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র আইনের মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৬’র অধিনায়ক লে. কর্নেল রওসোনুল ফিরোজ।
র্যাব-৬ এর সহকারী পরিচালক (লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া) মাহবুবুল আলম জানান, সাতক্ষীরার দেবহাটায় সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলায় কেন্দ্রিয় কারাগার থেকে তাকে খুলনায় র্যাব কার্যালয়ে আনা হয়েছে। এখানে অস্ত্রের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর আগে রবিবার সাতক্ষীরার দেবহাটা আমলী আদালতে অস্ত্র মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
জানা যায়, বিভিন্ন প্রতারনার অভিযোগে ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে আটক করে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দেবহাটা থানায় সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এদিকে ঢাকায় বিভিন্ন মামলায় টানা ১০ দিনের রিমান্ড শেষে ২৬ জুলাই সকালে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলা হয়। তখন তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪ মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হলেও ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে বিভিন্ন প্রতারণার কথা সাহেদ স্বীকার করেছেন বলে র্যাব সূত্র নিশ্চিত করেছে। সাতক্ষীরায় অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-৬ সিপিসি-১’র এসআই মো. রেজাউল করিম জানান, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা থেকে খুলনায় আনা হয়েছে। মামলায় জব্দ অস্ত্র ও গুলির তথ্য জানাসহ নানা বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নাম পরিবর্তন করা রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টদের কেউই। এ বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নাম সংশোধনে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেই তারা এটি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনু বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, একজন নাগরিকের নামের অতিরিক্ত অংশ সংশোধনে যে ধরনের দলিল-দস্তাবেজ প্রয়োজন, তার সবই চাহিদানুযায়ী জমা দেয়া হয়েছে এবং এর আলোকে সংশোধন করা হয়। কমিশনের এনআইডি উইংয়ে জমা দেয়া তথ্য যাচাই করে গরমিলের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। তবে উচ্চতর ডিগ্রির সনদটিতে তথ্য গোপন করেছিলেন কি না সেটিও খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম সংশোধন করে ‘সাহেদ করিম’ থেকে হয়েছেন ‘মোহাম্মদ সাহেদ’। তার এনআইডি স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, সাহেদের নাম পরিবর্তন জালিয়াতির সঙ্গে ইসির কারা জড়িত, খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রমাণসাপেক্ষে সাহেদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাহেদ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এই পরিচয়পত্রের নাম পরিবর্তন করেছেন। সাহেদের আসল নাম সাহেদ করিম, বাবার নাম সিরাজুল করিম, মা- মৃত সুফিয়া করিম। কিন্তু এখন তিনি যে এনআইডি ব্যবহার করছেন, সেখানে তার নাম মোহাম্মদ সাহেদ। ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট সাহেদের নামে যে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়েছিল, তার নম্বর ছিল ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫। আর এখন তার নামে থাকা স্মার্ট এনআইডির নম্বর ৮৬৫০৪০৬১৮৭। সাহেদ ২০১৯ সালে তার এনআইডি সংশোধন করার সময় জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, পাসপোর্টের কপি এবং ‘ও’ লেভেলের সার্টিফিকেট জমা দেন। এনআইডির তথ্য সংশোধনে তার নাম সাহেদ করিম থেকে মোহাম্মদ সাহেদ হয়। অথচ এখন জানা যায় তিনি এসএসসি পাস। কিন্তু নতুন এনআইডি প্রদানকারীদের ব্যাখ্যা হলো, মোহাম্মদ সাহেদ করিম থেকে মোহাম্মদ সাহেদ নামে পরিচয় সংশোধনের জন্য যে ধরনের তথ্য দরকার তা বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি সবই জমা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া মূল নাম পরিবর্তন না করায় ইসির এ ক্ষেত্রে সংশোধন নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।