দেশের তৈরিপোশাক খাত চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রফতানি হারিয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় রফতানি হারিয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি কমেছে ওভেন খাতে। এ খাতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রফতানি কমেছে ১৭ দশমকি ৬২ শতাংশ। তার মধ্যে শুধুমাত্র মার্চ মাসেই কমেছে ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ (২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়)।
শনিবার (১০এপ্রিল) তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ ১ হাজার ১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠানে ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে পরে ৯০ শতাংশ বাতিল প্রত্যাহার হয়েছে। কিন্তু মূল্যছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে।
এত আরও বলা হয়, করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রয়ের ধারা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে ইউরোপে খুচরা বিক্রয় কমেছে ২৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে-১৬ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পোশাকের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে দরপতন অব্যাহত আছে।
তৈরিপোশাক শিল্পের অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্রান্ড ক্রয়াদেশের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি, অনেকে আবার দেউলিয়া হয়ে গেছে। ফলে অনেক কারখানা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকে তাদের জাহাজীকৃত পণ্য অথবা স্টকের মূল্য পায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই সংকটে থেকেও শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়েছে। উপরোক্ত করোনা মোকাবিলায় কারখানাগুলো প্রণোদনা বাবদ যে ঋণ নিয়েছিল তা পরিশোধের সময় ঘনিয়ে এসেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু পোশাকখাত আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনের একটি অংশ, আমাদের ক্রয়াদেশগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে এবং সেই অনুযায়ী আমাদের উৎপাদন ও জাহাজীকরণ কার্যক্রম পূর্ব নির্ধারিত থাকে। তাই এই খাতে লকডাউন কার্যকর হলে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে। সেই সাথে সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কন্টেইনার জট ও অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে যার রেষ পরবর্তী কয়েক মাস টানতে হবে। উপরোক্ত পোশাকখাতকে লকডাউনের আওতায় আনা হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে বাজার হারানোর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, অন্য কোনো দেশে লকডাউনের কারণে তাদের শিল্প বন্ধ থাকার খবর আমাদের কাছে নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে এটুকু বলা যায় যে, আমরা সকলে মিলে এই দুর্যোগপূর্ণ সময়টি মোকাবিলা করতে হবে। কোভিডের প্রাদুর্ভাব কতটা দীর্ঘায়িত হবে তা আমরা জানি না, তাই বিগত দিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে দুর্যোগের বাকি সময়টুকু মোকাবিলা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পোশাকখাত ইতোমধ্যেই তার সুশৃঙ্খলা ও তুলনামূলক নগণ্য সংক্রমণ ঝুঁকির প্রমাণ দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই অর্জনের ওপর আস্থা রেখে স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রতিপালন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ বজায় রাখা, এত ব্যাপক সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষকে কর্মস্থলে ধরে রাখা এবং শিল্পকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের কৌশল হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বিজিএমইএ সহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনগুলো যে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তা আরও শক্তিশালী এবং বেগবান করতে এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অতএব, সার্বিক বিচারে রফতানিমুখী তৈরিপোশাকখাত সহ বস্ত্রখাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্প সমূহকে লকডাউনের বাইরে রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।