কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুস্থ-সচ্ছল ব্যক্তিরাও পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। এতে অসচ্ছল প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ভাতা প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের যোগসাজশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির কারণে এমনটা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের রমজান আলীর ছেলে মোবারক হোসেন। পেশায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলির চালক। দীর্ঘ আট বছর ধরে নিয়মিতভাবে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চালান মোবারক। তবে গত এক বছর ধরে নিচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাতা।
মোবারক হোসেন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। বাড়ির কেউ তার নামে টাকা তোলেন কি-না সেটা বাড়ির লোকেরা ভালো বলতে পারবেন।
অপরদিকে আমকাঁঠালিয়া গ্রামের আসাদুলের ছেলে থাকেন বিদেশে। শারীরিকভাবে সুস্থ আসাদুল বসবাস করেন পাকাবাড়িতে। তারপরও নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন তিনি।
একতারপুর গ্রামের সুরত আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তিনি সচ্ছল এবং সুস্থ। পেশায় ব্যবসায়ী। প্রতিবন্ধী ভাতার বিষয়ে নুর ইসলাম বলেন, আমার পায়ে সমস্যা। ঢাকায় ডাক্তার দেখিয়েছি। ওষুধ খেলে চলাফেরা করতে পারি। ওষুধ না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পায়ের সমস্যার জন্য আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই।
শুধু মোবারক, আসাদুল আর নুর ইসলামই নয় মিরপুরে এমন কয়েকশ সুস্থ ব্যক্তি পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ বছরে ৯ হাজার টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এদের মধ্য অনেকেই প্রকৃত প্রতিবন্ধী নয়।
প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জামসেদ আলী বলেন, এই তালিকা ইউনিয়ন কমিটি থেকে আনা হয়। তাই এই বিষয়ে ওই কমিটি ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কারচুপি থাকতে পারে। তবে আমাদের জানা মতে সুস্থ-সচ্ছল কেউ ভাতা পায় না। যদি এমন কেউ থাকে তাহলে তাদের নাম বাতিল করা হবে।
এদিকে বাড়ুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদার আলী বেলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে বলার পর আমরা চৌকিদার দিয়ে এলাকা থেকে লোক ডেকে আনি। উনারা (কর্মকর্তারা) যাচাই-বাছাই করে নামের তালিকা করেছেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
তবে এ অভিযোগ খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস। তিনি বলেন, অনেকে আছে প্রতিবন্ধী হওয়ার অভিনয় করে। এগুলো আসলে সবসময় সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়।
তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত দুস্থ-প্রতিবন্ধী মানুষগুলোকে ভাতার আওতায় আনার চেষ্টা করছি।