ধর্মীয় মহাকালে আদম (আ.) প্রথম মানুষ ও নবী। মানব জাতির আদি পিতা-মাতা আদম-হাওয়া থেকে মানুষের সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটেছে এবং আদম-হাওয়া থেকে নবী-রাসূলরা এসে আল্লাহ নামের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটিয়েছেন আল্লাহর ইচ্ছায়। নবী-রাসূলরা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহতে মজে থাকেন। নবী-রাসূলদের বংশীয় ধারায় সব নবী-রাসূলের বিকাশ ঘটেছে আল্লাহ পাকের মর্জি মাফিক।
সূরা আলে ইমরানের ৩৩ নম্বর আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহপাক সমগ্র সৃষ্টির ওপর নবী এবং নবী বংশকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আল্লাহর সৃষ্টি বেহেশত ও ফেরেশতাদের চেয়েও নবী বংশধররা শ্রেষ্ঠ বা মর্যাদাবান।
সূরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াতের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর হুকুমে খ্রিস্টান পাদ্রিদের সঙ্গে মোবাহেলার ময়দানে সত্য মিথ্যার প্রতিযোগিতায় রাসূলে পাক, মা ফাতেমা, হজরত আলী, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইনকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন। সত্য-মিথ্যার প্রতিযোগিতায় কচি শিশু ইমাম হাসান ইমাম হোসাইনকে রাসূলে পাক সঙ্গে নিলেন অথচ প্রধান প্রধান সাহাবিসহ ইমানে-আমলে, জ্ঞানে-গুণে পরিপূর্ণ সোয়া লাখ সাহাবির একজনকেও সঙ্গে নিলেন না। আল্লাহ ও রাসূলের বিবেচনায় কচি শিশু ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইনের সমকক্ষ সোয়া লাখ সাহাবির একজনও নয়। নবী বংশধর সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠ মোবাহেলার ঘটনায় এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছেন আল্লাহ ও রাসূল (সা.)।
সূরা শুরা (৪২)-এর আয়াত নম্বর ২৩-এ দেখা যাচ্ছে আল্লাহ পাক রাসূল (সা.)-এর জবানে বলেছেন, ‘আত্মীয়তার সদ্ব্যবহার ব্যতীত তোমাদের কাছে আর কিছুই চাই না।’ আল্লাহ পাক নবী বংশকে সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এ মহা সত্যকে মহানবী নুরনবী বিশ্বনবী শেষ নবীর জবানে গোটা উম্মতে মোহাম্মদসহ (মুসলমান) সমগ্র বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছেন। যদি কেউ সন্দেহ করতে চান তবে ধারাবাহিকভাবে ২৩, ২৪, ২৫ নম্বর আয়াত নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।
সূরা কাওসার আয়াত নম্বর ৩-এ বলা হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আপনার শত্রুরাই নির্বংশ।’ নবী কন্যা মা ফাতেমাকে যে বা যারা অবজ্ঞা-অস্বীকার করে নবী কন্যাকে গুরুত্বহীন করে দিয়ে মহানবী বিশ্বনবী নুরনবী শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে নির্বংশ বলেছে/এখন বলছে/ভবিষ্যতে বলবে তাদের আল্লাহ্ পাক নবী (সা.)-এর শত্রু বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের হাজার হাজার জাহিরি সন্তান থাকলেও তারা নির্বংশ। নবী (সা.)-এর শত্রুর অর্থই হচ্ছে আল্লাহ্র শত্রু।
সূরা বাক্বারাহ আয়াত নম্বর ১২৫ এ দেখা যাচ্ছে ‘মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।’ ‘মাকামে ইবরাহিম’ হল ইবরাহিম (আ.)-এর পদ চিহ্নিত পাথর যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর গড়েছেন। ইবরাহিম (আ.)-এর পদ চিহ্নিত পাথর ‘মাকামে ইবরাহিম’ বিশ্ব মুসলমানের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজের স্থান।
সূরা আহযাবের আয়াত নম্বর ৫৬ তে আল্লাহ্ পাক তাঁর ফেরেশতাকুলসহ নবীর ওপর দরূদ পাঠায় এবং ইমানদারদের নবীর ওপর দরূদ ও আদবের সঙ্গে সালাম পাঠাতে হুকুম করেছেন।
ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্নিত পাথর ‘মাকামে ইবরাহিমকে’ নামাজের স্থান বানাতে আমরা মোটেই কুণ্ঠিত নই কিন্তু দাঁড়িয়ে আমাদের মহানবী বিশ্বনবী নূরনবী শেষ নবীকে ও শেষ নবীর বংশধরদের সালাম পাঠাতে আজকের উম্মতের আপত্তির শেষ নেই। বিপক্ষ মাসলা-মাসায়েলধারীর অভাব নেই। নবী এবং নবী বংশধরদের সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে- আল্লাহতায়ালার এ নির্দেশ বাণী আমাদের ধর্ম প্রচারকরা বিলকুল ভুলে গিয়ে অন্ধ ও বধির হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। কোরআনের বাণী বা আয়াত যারা ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টায় যারা প্রচেষ্টারত তারা অবশ্যই জাহান্নামি। (২২ঃ৫১)
জমজম কূপ- ইবরাহিম (আ.)-এর সদ্যজাত পুত্র ইসমাইল (আ.) পায়ের বরকতে আল্লাহ্র রহমতে জমজম কুয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যার পানি মুসলিম বিশ্বের কাছে অতি পবিত্র। ইবরাহিম (আ.), ইসমাইল (আ.)-এর বংশে পূতপবিত্র বিশুদ্ধ মহানবী বিশ্বনবী নূরনবী শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রকাশ বিকাশ হয়েছে। মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর বংশধরের প্রতি আনুগত্যশীলতা আল্লাহর নিদর্শন- এ নিদর্শনের প্রতি কুফরি করলে বা অমান্য করলে তাদের প্রতি আল্লাহ্, ফেরেশতা ও সব মানুষের লানত বর্ষিত হবে। (৩ঃ৮৬ মতে)
নামাজে দরূদে ইবরাহিম- নামাজে দরূদ পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ পাক দরূদ পাঠের যে নির্দেশ দিয়েছেন এবং নবী বংধরদের সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এ মহাসত্যই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নামাজিদের মন মস্তিষ্ক অন্তরাত্মায় জবানে প্রচারে নবীর বংশধরদের প্রতি আনুগত্যশীলতার সামান্যতম চিহ্ন আজ দেখা যায় না।
নবী বংশধর আওলাদে রাসূলরা সমগ্র সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠ। তাই যারা আওলাদে রাসূলের কাছে বায়াত নেয়, তারা রাসূলের কাছেই আনুগত্যের শপথগ্রহণ করে, রাসূলের হাত অবশ্যই তাদের হাতের ওপর। দৈনিক যুগান্তর
লেখক : প্রাবন্ধিক ও আওলাদে রাসূল, টেপেরবাড়ী দরবার শরিফ, ধামরাই