সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ এনে মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুই শিশুর মা জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাবা ইমরান শরীফ।
সেইসঙ্গে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ায় জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে নাকানোকে। ক্ষমা না চাইলে তার নামে মামলা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটিশে।
ইমরান শরীফের পক্ষে তার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম মঙ্গলবার দুই সন্তানের মা নাকানো এরিকোর গুলশানের ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, মা নাকানো এরিকো মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাবা ইমরান শরীফের মানহানি করছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে এসে নাকানো বিভিন্নভাবে শিশু দুটির বাবাকে হয়রানি ও মানহানি করেছে। তারা বলছে, শিশু দুটিকে নাকি বাবা জাপান থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। কানাডিয়ান স্কুলে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, বাবা নাকি শিশু দুটিকে অপহরণ করেছে। যাতে শিশু দুটির স্কুলের ভর্তি বাতিল হয়।
সেখানে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে নোটিশে তুলে ধরা হয়। অথচ তার কোনো চোখ বাঁধা হয়নি। এই সব মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিশু দুটির বাবার মানহানি করেছে। বার বার শিশুর বাবাকে অপহরণকারী বলা হয়েছে। এভাবে বলে বাবাকে নানা ভাবে হয়রানি করছে এমন অভিযোগ করা হয় নোটিশে।
সাত দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ৫ কোটি টাকা না দিলে ও প্রকাশ্য ক্ষমা না চাইলে নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় আইনি নোটিশে।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের নাগরিক এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়েসন্তানের জন্ম দেন এরিকো। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।
এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিবাহবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
গত ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেয়। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
দুই মেয়ের বিবৃতি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে টোকিওর পারিবারিক আদালত গত ৩১ মে এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লাইলার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেয়। বিষয়টি নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেননি।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তবে ইমরান শ্রীলঙ্কা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন।
এরিকোর অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করান, যার ফল নেগেটিভ আসে। অথচ ইমরান রিপোর্টের ফল অবিশ্বাস করে তার সঙ্গে সন্তানদের সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও তা ছিল হৃদয়বিদারক।
গত ২৭ জুলাই এরিকোকে তার মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে আইনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে দুই মেয়ের জিম্মা চেয়ে রিট করেন জাপানি নাগরিক এরিকো। পরে আদালত আদেশ দেয়, বাবা-মা দুজনের কাছেই থাকবে তাদের দুই সন্তান।