করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আগামীকাল সোমবার (১২ জুলাই) থেকে দেশের জেলা, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ শুরু হবে। এছাড়া পরশু মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) থেকে সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে কোভ্যাক্সের মডার্নার টিকা প্রয়োগ শুরু হবে।
আজ রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত করোনা বুলেটিনে অধিদফতরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক।
ডা. শামসুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কোভ্যাক্স সুবিধায় পাওয়া মডার্নার টিকা দেয়া হবে দেশের ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায়। আগামী মঙ্গলবার থেকে এই টিকা দেয়া শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘সোমবার থেকে দেশের জেলা, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চীনের সিনোফার্ম ও মঙ্গলবার থেকে সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে কোভ্যাক্সের মডার্নার টিকা প্রয়োগ শুরু হবে। আজকের মধ্যেই কেন্দ্রগুলোতে টিকা পৌঁছে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে মডার্নার টিকা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
টিকা নেয়ার বিষয়ে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে যারা সিরামের টিকা নিয়েছেন তারা দ্বিতীয় ডোজও সিরামের টিকা নিবেন। অনেক উপজেলা ও সিটি করোপরেশন এলাকায় আগামী মঙ্গলবার থেকে মডার্নার টিকা দেয়া হবে। যখন মডার্নার টিকা দেয়া চালু হবে এসব এলাকা চীনের উৎপাদিত সিনোফার্মের টিকা দেয়া বন্ধ করে দিব।
‘কিন্তু যারা চীনের টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আবার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য কেন্দ্রে আসবেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীরা বলে দিবেন কোন কেন্দ্রে সিনোফার্ম দেয়া হচ্ছে আর কোনো কেন্দ্রে মডার্নার টিকা দেয়া হচ্ছে।
‘তবে নির্ধারিত কেন্দ্রে সতর্ক হয়ে টিকা নিবেন। কারণ এখন প্রথম ডোজ সিরামের টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির টিকা নেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
স্বাস্থ্যের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা আগে নিবন্ধন করে টিকা পাননি, তাদের যে কেন্দ্রে নিবন্ধন করা রয়েছে সেই কেন্দ্রে তিনি গেলেই টিকা পাবেন। ওই কেন্দ্রে যে টিকা থাকবে সেই টিকা দেয়া হবে। তবে নিবন্ধন ছাড়া টিকা পাবেন না। টিকা নেয়ার পর টিকা সনদ পাবেন।’
সিরামের টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিরামের টিাকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। এই মাস বা আগামী মাসের মধ্যে সিরামের টিকা আল্লাহর রহমতে আমাদের কাছে আসবে। এমন আশ্বাস পাওয়া গেছে। টিকা পেলেই আমরা সেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে টিকা পাঠিয়ে দিতে পারব।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত টিকা বিবিআইবিপি-করভির ডোজ হাতে আসার পর সরকার তিন শ্রেণির জন্য নিবন্ধন অ্যাপ চালু করে।
মডার্নার টিকা মাইনাস ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হয়। এ কারণে এ টিকা দেয়া হবে সিটি করপোরেশন এলাকায়। সিটি করপোরেশন এলাকার আওতায় থাকা সাধারণ মানুষ এই টিকার আওতায় আসবে। আর সিনোফার্মের টিকা রাখা যায় দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাই জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সিনোফার্মের টিকা দেয়া হবে।
এ পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৮০ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে দুই ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ জন। আর শুধু প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন।
সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৭১ হাজার ৮ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ২ হাজার ২৩৭ জন। এ ছাড়া ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৬৬ জন।
যাদের অগ্রাধিকার
করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রদানে এবার যাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে, তারা হলেন করোনা মোকাবিলায় সামনের সারির যোদ্ধা, নির্বাচিত প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা, সব ধর্মের প্রতিনিধি, মৃতদেহ সংস্কারকাজে নিয়োজিত কর্মী, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, নিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের প্রথম সারির কর্মকর্তা, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, স্থলবন্দরের কর্মচারীরা, সামরিক বাহিনীর সদস্য, জেলা-উপজেলায় জরুরি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, জাতীয় দলের খেলোয়াড়, চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্র-ছাত্রী, গণমাধ্যমকর্মী, স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।