অনলাইন ডেস্কঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলছে সোর্সদের ইশারায়। যাচাই-বাছাই ছাড়াই সোর্সদের সাজানো তথ্যের ভিতিত্তে অভিযান চালানো হয়। সোর্সদের টার্গেটে পড়া অনেকের কাছে মাদক না পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। ফলে অহেতুক ভোগান্তি ও সম্মানহানির শিকার হচ্ছেন নানা পেশার মানুষ। কোনো কোনো অভিযানে মাদক উদ্ধার হলেও তার একটি অংশ দিতে হয় সোর্সদের। সোর্সরা উদ্ধার হওয়া এই মাদক বিক্রি করছে বিভিন্ন স্পটে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে জেলাপ্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন এক ভুক্তভোগী। ওই অভিযোগে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেনসহ ৪/৫ জনের একটি দল গত ১৩ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৪৫, গগণ বাবু রোডের মৃত সামছুল আলমের ছেলে মোঃ আরিফুল আলমকে বাসা থেকে তুলে নেয়। পরে রূপসাস্থ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে নিয়ে তার স্ত্রী দুলু বেগমকে ফোনে জানানো হয় আপনার স্বামীকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। এ সময় উপ-পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন ও এএসআই জাহানারা খাতুন তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে না পারায় সেদিনই তার স্বামীকে ১০ পিস ইয়াবা দিয়ে সদর থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয় (নং-২৩)। তার স্বামী দু’মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন। এ ঘটনার বিবরণ জানিয়ে খুলনার জেলাপ্রশাসকের নিকট প্রতিকার চেয়ে ৮ জুলাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি আরিফুলের স্ত্রী দুলু বেগম (সিরিয়াল নং-৬৬৩)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১ জুলাই রাত ৮টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কথিত সোর্সদের ইশারায় নগরীর বাগমারা তেঁতুলতলা এলাকায় ক্যাবল অপারেটর সুমন হাওলাদের বাড়িতে ৬/৭ জনের একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ির নারী সদস্যদের সাথে অশোভন আচরণসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেওয়া হয়। গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে এমন কথা বলে অসহায় এ পরিবারটির ঘরে তল্লাশির নামে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করেন মাদক অধিদপ্তরের সদস্য ও কতিপয় সোর্স। পরবর্তীতে কোনো ধরনের মাদকের আলামত না পেয়ে তারা চলে যান। এতে ওই পরিবারটির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এলাকায় নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। ক্যাবল অপারেটর সুমন ওই এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ এম হাবীবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু লোকজন ১৪, বাগমারা এলাকায় আমার বাড়িতে প্রবেশ করেন। অধিদপ্তরের পরিদর্শক আহসান হাবীব ওই অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন। সে সময় আমি খুলনা জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারী শাখায় কর্মরত ছিলাম। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের অশালীন আচরণ ও অরাজকতা দেখে আমার পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। আমি খবর পেয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিক তৎকালীন জেলাপ্রশাসক ও এডিএমকে অবগত করি। ওনারা এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের নিকট জানতে চাইলে তারা সোর্স’র ভুল তথ্য বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিষয়টি নিয়ে আমার পরিবার এলাকায় সম্মানহানির শিকার হয়েছে। এলাকার লোকজন আমাদের সম্পর্কে নানা বাজে মন্তব্য করেছে। পরবর্তীতে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সেই পরিদর্শক আমার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও জানান, কথিত সোর্সদের কারণে সম্মানের সাথে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হওয়া মাদকের একটি অংশ দিতে হয় সোর্সদের। সোর্সরা ওই মাদক বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। এমনকি কোন এলাকায় বা স্পটে কে মাদক বিক্রি করবে তারও নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থাকা সোর্স নামধারীরা। এ সকল কথিত সোর্সদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাকে আক্রোশের শিকার হতে হয়। বিভিন্ন কায়দায় সোর্সরা তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, অভিযানে উদ্ধার হওয়া মাদক কোনোভাবেই সোর্সদের দেওয়া হয় না। তাদের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সোর্স মানি রয়েছে। সোর্সদের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো অভিযান চালানোর আগে আমরা সত্য-মিথ্যা যাচাই করি। মাদক বিক্রেতাদের ধরার জন্য আমরা সোর্সদের মাদক কেনার কাজে ব্যবহার করি। কারণ আমাদের কাছে কেউ তো মাদক বিক্রি করতে চাইবে না।
র্যাব-৬’র স্পেশাল কোম্পানি কামন্ডার মেজর শামীম সরকার বলেন, সোর্সরা সাধারণত কাজ করলে নির্দিষ্ট অর্থ পায়। তাছাড়া তাদেরকে সোর্স হিসেবে সাধারণ মানুষের চেনার কথা না। সোর্সদের মধ্যে কেউ যদি মাদক বিক্রির সাথে জড়িত থাকে বা মাদক বিক্রেতাদের সাথে সখ্য তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ’র (কেএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেই কেএমপি কাজ করছে। কোনো সোর্স মাদক বিক্রি বা ভয়ভীতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-সূত্র- সময়ের খবর